চট্টগ্রামে আকস্মিক বন্যায় কৃষি ও মৎস্য খাতে ৬৮২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলন আসার আগমুহূর্তে নষ্ট হয়েছে আমন ধান। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ৫ হাজার ৫৪১ হেক্টর খামারের মাছ। এক হিসাব অনুযায়ী, কৃষি খাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৭ জন কৃষক পরিবার, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৯১ কোটি ৮৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬০০ টাকা। মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ২৯০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট দুই দপ্তরের ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান বলেন, ১০ দিনে চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুই জেলায় ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতি হয়েছে। বীজতলা থেকে শুরু করে আবাদকৃত আমন বন্যায় নষ্ট হয়েছে। তিনি জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিতের পর কৃষকদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে বীজ কোনো কোনো এলাকায় কাজে আসবে না। বন্যার পানি নামতে আরও চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগতে পারে। এ মুহূর্তে বন্যাকবলিত এলাকায় বীজতলা তৈরি করে আমনের চারা সরবরাহ করা কষ্টসাধ্য হবে। বীজতলা তৈরির জায়গা নেই। তাই আশপাশের এলাকায় বীজতলা তৈরি করে চারা আকারে বন্যাদুর্গত এলাকায় সরবরাহ করা হবে। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ জানান, চট্টগ্রামে বন্যায় মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মিরসরাইয়ে ১৪২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ফটিকছড়িতে ৩৩ কোটি, হাটহাজারীতে ২৩ কোটি, রাউজানে প্রায় ১০ কোটি টাকা। অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন দ্রুত সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পুকুর/দিঘির অবকাঠামোগত সংস্কার করে মৎস্য খামারিদের পুনর্বাসন করতে হবে। তার জন্য আমাদের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন পোনা। আমরা দ্রুত সময়ে পুনর্বাসনের কাজ শুরু করব।
চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় আমন আবাদে ৭৫ হাজার ৫৪০ কৃষক পরিবারের ক্ষতি হয়েছে ২৫১ কোটি ৬৩ লাখ ৪২৪ হাজার টাকার। আমনের বীজতলাতে ৩৯ হাজার ২০৩ কৃষক পরিবারের ক্ষতি হয়েছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৫ হাজার টাকার। আউশ আবাদে ২৩ হাজার ৬৭৪ কৃষক পরিবারের ক্ষতি হয়েছে ২৪ কোটি ৩৩ লাখ ৯৪২ হাজার টাকার। শরৎকালীন সবজিতে ২২ হাজার ৬৫০ কৃষক পরিবারের ক্ষতি হয়েছে ১০৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আদা চাষে ৯৫ কৃষক পরিবারের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ টাকার। হলুদ চাষে ৯৪ কৃষক পরিবারের ক্ষতি হয়েছে ১৮ লাখ ৯ হাজার টাকার, আখ চাষে ৫০ কৃষক পরিবারের ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও পান চাষে ৬৫ কৃষক পরিবারের ক্ষতি হয়েছে ৩৪ লাখ ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৭ কৃষক পরিবার, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩৯১ কোটি ৮৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬০০ টাকার ফসল। মোট ৫৮ হাজার ৪৯২ হেক্টর জমিতে ক্ষতি হয়েছে ৮৮ হাজার ৩৬৭ টন ফসল।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যে জানা গেছে, বন্যায় ছোট-বড় ১৬ হাজার ৮৬৪টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব মৎস্য খামারের মোট আয়তন ৫ হাজার ৫৪১ হেক্টর। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ১৬ হাজার ৫৯৫ টন মাছ, যার আনুমানিক ক্ষতি ২৮৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে জেলার মৎস্য খাত আর্থিকভাবে ক্ষতি হয়েছে ২৯০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।