প্রতিষ্ঠার তিন দশক পেরিয়ে গেলেও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) মেডিকেল সেন্টারের অবস্থা রয়ে গেছে প্রায় আগের জায়গায়। আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি তো দূরের কথা, এখনো সেখানে নেই একটি পূর্ণাঙ্গ রোগ নির্ণয়যন্ত্রও। ফলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সামান্য অসুস্থতাতেও ছুটতে হয় বাইরে। এমনকি রোগ নির্ণয়যন্ত্রের অভাবে অনুমান নির্ভর চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে মনে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
নেই রোগ নির্ণয়যন্ত্র
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরপরই একটি ছোট পরিসরে গড়ে তোলা হয় মেডিকেল সেন্টার। সেই সময় থেকেই শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছিল। কিন্তু তিন দশক পেরিয়ে গেলেও অবকাঠামো কিংবা যন্ত্রপাতির উন্নয়ন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই কোনো আধুনিক রোগ নির্ণয়যন্ত্র, নেই রক্তপরীক্ষা বা তাপমাত্রা মাপার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ফলে শিক্ষার্থীদের জ্বর, অ্যানিমিয়া, ইনফেকশন বা অন্যান্য রোগ নির্ণয়ে পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। ডাক্তাররা জানান, এখনো সেন্টারে নেই ইউরিন টেস্ট, সিরাম টিএসএইচ, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, আইরন প্রোফাইল, সিআরপি, ইসিজি বা রক্তপরীক্ষার মতো মৌলিক রোগ নির্ণয় সরঞ্জাম।
মেডিকেল সেন্টারের ডেপুটি চিপ মেডিকেল অফিসার ডাক্তার হাবিবুল ইসলাম জানান, মাঝে মাঝে অনেক শিক্ষার্থী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তাদেরকে যখন মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে আসে, তখন আমরা এক্সাক্টলি রোগের কোন কারণ নির্ণয় করতে পারিনা। রোগীর হার্টের সমস্যা নাকি অন্য কোন কারণে সমস্যা হয়েছে তাও আমাদের বোঝার উপায় থাকে না। ফলে বাধ্য হয়ে সিলেটের অন্য মেডিকেলে রেফার করতে হয়। অন্তত একটি ইসিজি মেশিন থাকলেও আমরা সমস্যাটা বুঝতে পারতাম।
নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত চিকিৎসক সংখ্যা অপ্রতুল। সাধারণ চিকিৎসক থাকলেও চক্ষু, চর্ম, দন্ত, মানসিক স্বাস্থ্য বা গাইনোকোলজি বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তার নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা নানা জটিল সমস্যা নিয়ে হয় বাইরে চিকিৎসা নেয়, নয়তো চিকিৎসা নিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। শিক্ষার্থীরা অন্তত সপ্তাহে একদিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদানের দাবি জানিয়ে আসলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা হয়নি এখনো। এমনকি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদানের দাবিতে স্মারকলিপিও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জনবল সংকট দীর্ঘদিন
ডাক্তারদের সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই মেডিকেল সেন্টারটি জনবল সংকটে ভুগছে। এখানে রয়েছেন মাত্র একজন নার্স, একজন সহকারী নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন ক্লিনার। নার্স কোনো কারনে অসুস্থ বা ছুটিতে থাকলে বিগ্ন হয় স্বাস্থ্যসেবা। এমনকি মেডিকেল সেন্টারে দক্ষ নার্স না থাকায় ইনজেকশন দেওয়া কিংবা রোগীর পরবর্তী ফলোআপ করতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন ডাক্তার হাবিবুল ইসলাম।
মেডেকেল সেন্টারে অধিকাংশই স্কেবিস ও গ্যাস্ট্রিক রোগী
মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রায় অধিকাংশই স্কেবিস বা চুলকানিজনিত চর্মরোগে আক্রান্ত-এমন তথ্য জানিয়েছেন মেডিকেল সেন্টারের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ঘনবসতি ও নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঘাটতির কারণে স্কেবিসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। একই বিছানা, কাপড় বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের সামগ্রী ভাগাভাগি করার ফলে এর বিস্তার আরও বাড়ছে। অন্যদিকে, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, আবাসিক হলে অতিরিক্ত ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণ, রুটিন অনুযায়ী খাবার না খাওয়া এবং মানসিক চাপে থাকার কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়ছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিকেল সেন্টারের ডেপুটি চিপ মেডিকেল অফিসার ডাক্তার হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন কর্তৃপক্ষের কাছে মৌলিক রোগ নির্ণয়যন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আপডেট পাইনি। রোগ নির্ণয়যন্ত্র না থাকার ফলে রোগের কারণ নির্ণয় করাও সম্ভব হয়না।’
এ বিষয়ে মেডিকেল সেন্টার পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কবির বলেন, ‘মেডিকেল সেন্টারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং রোগ নির্ণয়যন্ত্র আনার ব্যাপারে কথা চলছে। আমাদের সবচেয়ে বেশি সংকট নার্স। আমরা চেষ্টা করছি মেডিকেল সেন্টারের সংকট কাটিয়ে উঠতে। আশাকরি সমাধান হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন