শেখ হাসিনার পতনে ভারত অসন্তুষ্ট হয়েছে, তাদের হৃদয়ে ভয়ংকর জ্বালা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা অসম চুক্তি করেছিলেন আদানি গ্রুপের সঙ্গে। যারা ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। সেই বকেয়া কমানোর জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে। পরিশোধ হয়েছে অনেকটা। আরও বাকি প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার। তিন মাসের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করেছে অনেক। তারপরও তারা সন্তুষ্ট নয়। তারা বাংলাদেশে দেওয়া বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। হুমকি দিয়েছে পুরোপুরি বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার। কেন? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নেই এ জন্য? এ জন্যই কি তাদের এত রাগ? এত ক্ষোভ? গতকাল জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উদ্যোগে রাজধানীর বিএফডিসির সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন।
এ সময় জাসাসের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক হেলাল খান, সদস্যসচিব জাকির হোসেন রোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শিবা সানু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইথুন বাবু, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক সেটা হচ্ছে শেখ হাসিনা ভার্সাস ভারত। বাংলাদেশ আর ভারত নয়, ভারতের পলিসিমেকারদের সঙ্গে এই সম্পর্ক। শেখ হাসিনার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। তাহলে কত গভীর এই সম্পর্ক, এখানে জনগণ কোনো ম্যাটার নয়।’
ভারতের নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, “আপনাদের একটা নীতি আছে, আমরা জানি। আমি পার্শ্ববর্তী দেশের নীতিনির্ধারকদের বলতে চাই, তারা যখন একটি উপমহাদেশ ছিল, যখন এই উপমহাদেশে স্বাধীনতার আন্দোলন চলছে এবং ওই সময় যখন আরও অনেক স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করা হচ্ছে, তখন তাদেরই একজন স্বাধীনতাসংগ্রামী নেতা প্রধানমন্ত্রী, তিনি এটিকে পছন্দ করেননি। তার একটি বই আছে ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’। যেটার রচয়িতা তাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। সেখানে এক জায়গায় তিনি বলেছেন, তোমরা যারা এখানে মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র করছো, কেউ খালিস্তান রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন করছে এটা টিকবে না, তোমাদের আমরা একটা সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসন দিতে পারি, কিন্তু তোমাদের স্বাধীন পলিটিক্যাল ইউনিট দেব না।
এটা হচ্ছে ভারতের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। তারা ওই নীতি নিয়ে চলে কিন্তু আপনারা কি তাতে সার্থক হয়েছেন? হবেন না। কারণ এ দেশের মৃত্তিকা থেকে আবরার ফাহাদ, আবু সাঈদ, মুগ্ধর জন্ম হয়। কোনো দিন আপনারা সেটা পারবেন না।”
তিনি বলেন, ‘বাংলার মানুষ যেমন স্বাধীনতাপ্রিয়, বাংলার মানুষ যেমন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ ঠিক তেমনি তারা গণতন্ত্রপ্রিয়। সুতরাং কর্তৃত্ববাদী, দুঃশাসন, একদলীয় দুঃশাসন এবং জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে আপনারা কখনোই আপনাদের প্রতিভূকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন না।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ’৫২, ’৬২, ’৬৯, ’৭১ এ যেন এক বিপ্লবের রক্তধারা বাংলার তরুণদের কাছ থেকে শেখ হাসিনা ওটাকে কেড়ে নিতে পারেননি। অনেক চেষ্টা করেছেন, অনেক অপপ্রচার করেছেন, অনেক ধরনের কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন দিয়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন। বিভিন্ন বই রচনা করেছেন আর আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সত্য যে রচনা করতে গিয়েছে তাদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে কথা বলতে গিয়েছে তাকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। না হলে লালদালানের মধ্যে তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাঝখান দিয়ে আবার যখন তারুণ্য জেগে উঠল কী অভূতপূর্ব আন্দোলন- এক ভাই মারা যাচ্ছে আরেক ভাই তার পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, পুলিশ নিজেই বলেছে, এরা তো কমে না, একটা করে গুলি করে মারি আরেকজন এসে দাঁড়ায়।
রিজভী বলেন, ‘যারা বাংলাদেশকে কব্জা করতে চায়, যারা আমাদের স্বাধীনতাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়, যারা আমাদের ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করতে চায়, তাদের বলে রাখা উচিত এই বাংলার ঘরে ঘরে আবরার, মুগ্ধ, আবু সাঈদদের যুগ যুগ ধরে জন্ম হয়েছে। এই বীরত্বগাথা ইতিহাস দিল্লি হয়তো জানে না? আপনারা হয়তো জানেন না পার্শ্ববর্তী দেশ- কত বীরের আত্মদানের মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশ। আধিপত্যবাদী নীতির মধ্য দিয়ে এ দেশ চালাবেন আপনারা। এ দেশের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করবেন, কখনোই পারবেন না।’