জলবায়ু তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন না পাওয়ায় জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা এনডিসি ২.০-এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণ কমানোর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অথচ উন্নত দেশগুলো সময়মতো অর্থায়ন নিশ্চিত করলে পরবর্তী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা এনডিসি ৩.০-এর মাধ্যমে পাঁচ গুণ বেশি কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব। আর এজন্য প্রয়োজন ৩১৬ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ২৭০.১৩ বিলিয়ন ডলারই শর্তসাপেক্ষ, অর্থাৎ উন্নত দেশগুলোর অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের বাংলাদেশের এনডিসি-৩.০ : উচ্চাকাক্সক্ষা, কর্মকাণ্ড এবং অর্থায়নের পথ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান। ফলাফল উপস্থাপন করেন সহ-গবেষক তন্ময় সাহা ও সাবরিন সুলতানা। এ সময় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং এনডিসি ৩.০ প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত প্রফেসর ইজাজ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ উন্নত ও মধ্য আয়ের দেশগুলো থেকে কম কার্বন নিঃসরণ করলেও স্বল্পোন্নত ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম কার্বন নির্গমনকারী দেশ। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৫% (শর্তহীন) কমানোর অঙ্গীকার করেছিল। ২০২১ সালের এনডিসি ২.০-তে তা বাড়িয়ে শর্তহীন ৬.৭৩% ও শর্তসাপেক্ষে (অনুদান প্রাপ্তি সাপেক্ষে) ২১.৮৫% নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে শর্তহীন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯% অর্জিত হয়েছে। তবে শর্তসাপেক্ষ লক্ষ্য পূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও প্রযুক্তির ঘাটতি। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ২৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জলবায়ু তহবিলের মাত্র ১.২৫% অর্থায়ন পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার ৮৯.৪৭ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই অক্সাইড সমতুল্য নিঃসরণ কমানোর পূর্ণ সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
উন্নত দেশগুলো সময়মতো অর্থায়ন নিশ্চিত করলে পাঁচ গুণ বেশি নিঃসরণ কমানো সম্ভব। প্রয়োজনীয় অর্থায়ন নিশ্চিত হলে এনডিসি ৩.০-এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ-জ্বালানি, শিল্প, কৃষি, বন ও ভূমি, নগর ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন খাত থেকে কীভাবে বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ কমানো যায় তা তুলে ধরা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং এনডিসি ৩.০ প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত প্রফেসর ইজাজ হোসেন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভিত্তিতেই ন্যায্য রূপান্তর হতে হবে। এনডিসি ৩.০-এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নজর দেওয়া হচ্ছে।
এনডিসি বাস্তবায়নে নাগরিকসহ সব অংশীজনের সঙ্গে ব্যাপক ভিত্তিতে সংলাপ করতে হবে।
এম জাকির হোসেন খান বলেন, জলবায়ু তহবিলের ৯৮ ভাগ অর্থ উন্নত দেশগুলো দেয়নি। শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে। আগামী ৩০তম জলবায়ু সম্মেলনে (কপ৩০) দেশভিত্তিক তহবিল নির্ধারণের দাবি জানাতে হবে। এখানে বিদেশিরা এসে দূষণ ঘটিয়ে কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মুনাফা নিয়ে যাচ্ছে, অথচ কার্বন ট্যাক্স দিচ্ছে না। প্রয়োজনে আমাদের কার্বন ট্যাক্স আরোপ করতে হবে। জলবায়ু সম্মেলনে এই বার্তা দিতে হবে। প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর নেতাদের প্রকৃতি ও জলবায়ু বিনাশী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পৃথিবী ও প্রাণকে সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার করতে হবে।