ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক বিভাজকে কাটা (অবৈধ ইউটার্ন) স্থানে গাড়ি ঘোরানো, তিন চাকার যান চলাচল, রাস্তার মাঝে বাসে যাত্রী ওঠানো-নামানোসহ নানান বিশৃঙ্খলা চলছে। উল্টোপথে ভ্যানগাড়ি, রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, সিএনজি চালিত অটোরিকশা এই মহাসড়কে চলছে বাধাহীনভাবে। ফলে দিনদিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। কোথাও সিএনজি অটোরিকশা, আবার কোথাও রিকশা, কোথাও আবার ইজিবাইকের সঙ্গে দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কা লেগে প্রাণ ঝরছে সড়কটিতে। সড়কটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে পুলিশও উদাসীন। কোথাও পুলিশের নজরদারি নেই এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা জেলার অংশে পড়েছে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর, মদনপুর, সোনারগাঁ, মেঘনা, দাউদকান্দি, গৌরীপুর, কুটুম্বপুর, মাধাইয়া, চান্দিনা, বিশ্বরোডসহ পুরো সড়কে ভ্যানগাড়ি, রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। আবার কোথাও কোথাও চলছে নছিমন ও ভটভটি। তিন চাকার বাহন ছাড়াও যাত্রীরা আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন ফিটনেসবিহীন ‘দরজাখোলা’ মাইক্রোবাস ব্যবহার করে থাকেন। জমিচাষের ট্রাক্টরের পেছনে ট্রলি লাগিয়ে মহাসড়ক দাবড়ে বেড়াতে দেখা গেছে। এই মহাসড়কটির দুমুখী লেনেই উল্টো পথে চলছে তিন চাকার যান। এ কারণে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরিসহ বড় গাড়িগুলোর চালকদের হঠাৎ ব্রেক কষে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। কোথাও আবার নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পেড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। গত সোমবার এই মহাসড়কটির কুমিল্লা অংশে জাগুরঝুলী বিশ্বরোড এলাকায় ইউটার্নে লাকসামগামী তিশা ট্রান্সপোর্ট বাস সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। একই সঙ্গে কয়েকটি দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। তবে মহাসড়কটিতে সাড়ে তিন ঘণ্টার যাত্রায় কোথাও হাইওয়ে পুলিশের কোনো সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে দেশের ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপর ২০১৯ সালে উচ্চ আদালত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ১০ জেলার মহাসড়কে তিন চাকার বাহন না চালানোর নির্দেশ দেয়। যার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে মহাসড়কে তিন চাকার যান নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি অপারেশন হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহনসহ অযান্ত্রিক বাহন নিষিদ্ধ। তবুও বিভিন্ন স্থানে চাহিদা অুনযায়ী চলছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এসব রিকশা চলছে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা জব্দ করি এবং ডাম্পিং করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জনবল সংকটের কারণে অভিযান দৃশ্যমান নয়। নিয়মিত টহল এবং একই সঙ্গে নিষিদ্ধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আমাদের অব্যাহত রয়েছে।
জানতে চাইলে যোগাযোগ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। এ সড়কে ধীরগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করা না গেলে শুধু প্রাণহানিই বাড়বে না, জাতীয় অর্থনীতিও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বিকল্প গ্রামীণ সড়কে এসব অটোরিকশা সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।