চারিদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্ক। মেলছে গুজবের ডালপালা। কেউ কেউ বাসা-বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে কুমিল্লার খেটে খাওয়া মানুষজন জীবনের তাগিদে ছুটে চলছেন। তারা জানিয়েছেন করোনা ভাইরাস নিয়ে তাদের ভাবনা।
আমার কামের শইল কিছুই হইতো না
গোলাপ মিয়া ফল বিক্রেতা। বাড়ি নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলায়। কুমিল্লায় থাকেন। মৌসুমী ফল বিক্রেতা গোলাপ মিয়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে মোটেও বিচলিত নন। দিন শেষে ৮শ’/এক হাজার টাকা নিয়ে ভাড়া বাসায় যেতে পারলেই খুশি। করোনায় মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, মারা যাচ্ছে, আপনার ডর ভয় করে না ?
গোলাপ মিয়া স্মিত হাসি দিয়ে বলেন, আমার ছেলে আমারে ফোন দিয়ে কয় বাবা তুমি মুখোশ (মাস্ক) পইরো। আমি কই বাপজান আমার কামের শইল, আমার কিছুই হইতো না। তুমি মুখোশ পইরো। তুমি চাকুরি করো। তোমার শইল ভালো না থাকলে তোমার মা চিন্তা করবো।
করুণা আল্লার গজব!
শামিম, তালা মেকানিক। তিনি বলেন, ভাই হোনেন, করুণা (করোনা) হইলো আল্লার গজব। পাপীরা এই গজবে ধ্বংস হইবো। আমরা পাপ করি না। তাই টেনশন নাই। কথাগুলো বলছিলেন কান্দিরপাড় এলাকায় তালাচাবি বিক্রেতা শামিম।
শামিম বিশ্বাস করেন, করোনা মানুষের কৃতকর্মের ফল। করোনা নিয়ে ভয় লাগে না। এমন প্রশ্নের জবাবে শামিম বলেন, বেশি ভয় লাগে না। আর ভয় লাগলেও কি। হুনছি বাংলাদেশে তিনজন করুণায় পাইছে (আক্রান্ত হয়েছে)। আবার এর মইধ্যে দুইজন ভালা হইছে।
করোনা নিয়ে ভয় না পাইলে মাস্ক পরে আছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শামিম বলেন, ভাই হারাদিন ধুলাবালির মইধ্যে কাম করি। নাক দিয়া ধুলাবালি যায়,রাইতে সর্দি লাগে। ধুলা বালি থেকে বাইচতে মুখোশটা পরি।
ভয় লাগনের সময় কই?
খসরু মিয়া, শরবত বিক্রেতা। কান্দিরপাড় এলাকায় এলোভেরা দিয়ে শরবত বিক্রি করেন। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। করোনার সংক্রমণ এবং এতে মৃত্যু নিয়ে কিছুটা সংশয় আছে। খসরু বলেন, ভাই টিভিত দেখছি। নিজের চোখের সামনে দেহি নাই। ভয় লাগে না আপনার? যদি করোনায় আক্রান্ত হন। খসরু বলেন, ভাই হারাদিন শরবৎ বেচি, রাইতে হাওন শেষে একট্টু টিভি দেইখ্খা ঘুমাই। ভয় লাগনের সময় কই। দিনের বেলায় কাজের সময় সবাই মাস্ক পরে। আপনি দেখেন নাই টিভিতে। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষ মুখে মাস্ক লাগায়,আপনি কেন মাস্ক পরেন না। খসরুর সোজা সাপ্টা উত্তর, এহন মাস্কের দাম বেশি। একটু কমুক, পরে মাস্ক কিনবো!
কিস্তির জ্বালায় আছি- করুণায় কি করবো!
বাবলু মিয়া, সিএনজি অটোরিকশা চালক। শাসনগাছা থেকে কান্দিরপাড়ে যাত্রী পরিবহনের কাজ করেন। বাড়ি চান্দিনার মাইজখার। চারদিকে করোনা ভাইরাসে মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত্র। তাকে প্রশ্ন করা হয়- আপনার ভয় লাগে না? বাবলু বলেন, ভাই সপ্তাডা না ঘুরতেই ১২শ’ টেহা কিস্তি দেওন লাগে। করুণায় ভয় পাইয়া কি অইবো। করুণায় কি করবো। পাশের দুই একজন সিএনজি চালককে দেখিয়ে বললাম, উনারাতো মুখে মাস্ক লাগিয়েছে। বাবলু বলেন, হেতারা আগের থাইক্কা পরে। করুণা আইছে হেদিন। ভাই মুখোশটা পরলে মনে অয় দোম বন্ধ অইয়া আইয়ে। এ লাইগ্গা পরি না!
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার