চিকিৎসাসেবার একটা ভাগ হচ্ছে, ওষুধ/সার্জারি দিয়ে সুস্থ করে তোলা (কিউরেটিভ) আর আরেকটা ভাগ হচ্ছে, রোগীকে নানাভাবে সাপোর্ট দেয়া যাতে রোগীর শরীর নিজেই নিজেকে ভালো করে তুলতে পারে (সাপোর্টিভ)।
করোনার এখন পর্যন্ত কোনো কিউরেটিভ চিকিৎসা নাই, তাকে ওষুধ দিয়ে সুস্থ করার কিছু নেই।
তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর দেয়া হয় সাপোর্টিভ চিকিৎসা, যেটা শুরুতে এবং বেশিরভাগ সময়ই ঘরেই দেয়া সম্ভব। হাসপাতাল মূলত তার অন্য অসুখগুলো (কো-মরবিডিটি) ম্যানেজ করে। তার শরীরের জন্য যখন যেটা দরকার, সেটাই তার জন্য করে। যথাযোগ্য পুষ্টি ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করে, যাতে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় ও নিজেই যুদ্ধ করতে পারে করোনার বিরুদ্ধে।
হাসপাতাল নিয়মিত ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস/ অক্সিজেন চেক, ইনফেকশন কন্ট্রোল, কিডনির/ ক্যান্সার/ হার্টের চিকিৎসা, মুখে খেতে না পারলে অন্য উপায়ে শরীরে খাবার দেয়া, রক্তের নানা উপাদানের ব্যালান্স বজায় রাখা ইত্যাদি করতে থাকে। জ্বর/ বমি/ কাশির ওষুধ, ডায়রিয়ার ওষুধ দেয়। সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি, খাবার, আইসোলেশন ইত্যাদি তো আছেই।
আর জরুরি অবস্থায় অর্থাৎ প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে করোনা-রোগী হাসপাতালে যাওয়ামাত্র তাকে আলাদা কক্ষে সিকিউরড করা, মাস্ক দেয়া ও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের (আর্টিফিশিয়াল ভেন্টিলেশন) এর ব্যবস্থা করা হয়। রোগী যেন আরও একটি দিন বেশি টিকে থাকে ও তার শরীর করোনাকে পরাস্ত করার দরকারি এন্টিবডি বানাতে সক্ষম হয়! অক্সিজেন দেয়াটা আরো গুরুত্বপূর্ণ এইজন্যে যে, পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে আগে থেকে দুর্বল হয়ে থাকা রোগীর কিডনি, হার্ট, চোখ, ব্রেইন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নষ্ট হয়ে যেতে থাকে ও রোগী মারা যায়। এজন্যেই বলা হয়, করোনা বয়স্কদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ!
এখন হাসপাতালের আইসিইউতে ভেন্টিলেশনের যে মেশিনটি থাকে, সেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি মেশিন। সাধারণ অবস্থায়, খুব কম রোগীকেই সেখানে নিতে হয় বলে, এই মেশিন বেশি সংখ্যায় পৃথিবীর কোনো হাসপাতালেই থাকে না। থাকার দরকারও হয় না। কিন্তু অত্যন্ত ছোঁয়াচে এই করোনা যদি কো-মরবিডিটিওয়ালা অনেক মানুষকে একসাথে আক্রমণ করে, তবে তাদের জন্য একসাথে প্রচুর ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা অসম্ভব। উন্নত দেশেও সেটা অসম্ভব! তাই মৃত্যুর হার এত বেশি, এমনকি উন্নত দেশেও!
তাই করোনার উপসর্গ আছে, অথবা করোনা-সনাক্তকৃত রোগীকে তার বাসাতেই শুরু থেকে সব ধরনের সাপোর্ট দিয়ে রাখা দরকার যাতে হাসপাতাল পযন্ত যেতে না হয়। যেমন, ডায়াবেটিসের রোগী নিয়মিত তার ব্লাড সুগার মেইনটেইন করবে, প্রেশার/থাইরয়েডের/কিডনির রোগীটি নিয়মিত ওষুধ খাবে, মোদ্দা কথা নিজেকে যতোটা সম্ভব কন্ট্রোলে রাখবে। অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো সুস্থ থাকলে শরীর খানিকটা সময় পাবে এবং শরীরের এন্টিবডি তখন করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হবে।
তবে অবশই রোগীর অবস্থা অনুযায়ী হাসপাতালে যেতে হবে!
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
লেখক: কানাডার কমিউনিটি নার্স
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা