সৌদি আরবের বিশ্বখ্যাত মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন বাংলাদেশি আলেম খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তারা হলেন শায়খ শারীফ আহমাদ আল মাদানি, শায়খ এরশাদুর রহমান ও শায়খ মুশাহিদ দেওয়ান। তারা বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন কওমি মাদরাসা থেকে দাওরায় হাদিস সম্পন্ন করেছেন।
জানা যায়, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদিস বিভাগে শায়খ শারীফ আহমাদ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
তিনি এক যুগ ধরে পবিত্র মসজিদে নববী একাডেমিতে শিক্ষক, পরীক্ষক, প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। তার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার আন্দিউড়া গ্রামে। ২০১২ সালে তিনি সৌদি সরকারের বৃত্তি নিয়ে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে তিনি প্রথমে আরবি ভাষায় ডিপ্লোমা করেন।
এরপর হাদিস বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ড. আবদুল্লাহ বিন সালেম আল আহমাদির তত্ত্বাবধানে এমফিল করেন। তার থিসিসের বিষয়বস্তু ছিল ‘আল-আহাদিস আযযাইদাহ ফি কিতাবি ফাতহিল গাফফার লিরুবায়ি আলা কিতাবি মুনতাকা আখবার লিল মাজদি ইবনে তাইমিয়াহ’। বর্তমানে তিনি একই বিভাগে পিএইচডি করছেন।
এর আগে তিনি পুরান ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে দাওরা হাদিস ও ইফতা সম্পন্ন করেন। ২০১১ সালে তিনি বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় সারা দেশে মেধা তালিকায় ১৬তম স্থান অধিকার করেন। পাশাপাশি তিনি দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপি ৫ অর্জন করেন। পরে তিনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধীনে ফাজিল ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
শায়খ এরশাদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী গ্রামে। তিনি প্রথমে হ্নীলা দারুস সুন্নাহ মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রামের জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়ায় গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি প্রথমে আরবি ভাষা বিভাগে অনার্স করেন এবং ভাষাতত্ত্বে মাস্টার্স করেন। একই বিভাগের গবেষক ড. যুবাইর বিন মুহাম্মাদ আইয়্যুবের তত্ত্বাবধানে তিনি এমফিল সম্পন্ন করেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল ‘আসরুল লুগাতুল আরাবিয়্যাহ ফিল লুগাতিল বাংগালিয়্যাহ : দিরাসাতুন তাকাবুলিয়্যাহ’, (বাংলা ভাষায় আরবি ভাষার প্রভাব : একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা)। বর্তমানে তিনি পিএইচডি করছেন।
এদিকে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শায়খ মুশাহিদ দেওয়ান। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে। ২০১৬ সালে সৌদি সরকারের বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে সেখানে যান। সেখানে আরবি ভাষায় অনার্স ও ভাষাতত্ত্বে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি এমফিল করছেন। এর আগে তিনি ঢাকার দারুল উলুম মাদানীনগর মাদরাসা থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেন এবং বেফাক বোর্ডের অধীনে সারা দেশে মেধা তালিকায় ১০তম স্থান অধিকার করেন। তা ছাড়া তিনি দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ অর্জন করেন।
বিশ্বব্যাপী ইসলামী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৬২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সৌদি বাদশাহ সাউদ বিন আবদুল আজিজের নির্দেশনায় মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি হওয়ায় গিনেস বুক রেকর্ড অর্জন করে। এখানে ইসলামী শরিয়াহ, দাওয়াহ, কোরআন, হাদিস ও আরবি বিভাগের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স ফ্যাকাল্টি রয়েছে। এসব বিভাগে ১৭০টির বেশি দেশের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। বিশ্বের ৫০টির বেশি ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের বিচিত্র সংস্কৃতির মিলনমেলা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। এই ইসলামী বিদ্যাপীঠ থেকে অধ্যয়ন শেষ করে দেশে ফিরে গিয়েছেন ৯৭ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ২০ হাজার ৩২ জন বাংলাদেশি। বর্তমানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্রসংখ্যা ৪৪৮ জন।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম