ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে, বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অংশীদারত্বে এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত প্ল্যাটফর্মস ফর ডায়ালগ (পিফরডি) প্রকল্পের অংশ হিসেবে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশাসন এবং সামাজিক জবাবদিহিতা (আইজিএসএ)’ বিষয়ের নিয়ে সম্প্রতি ময়মনসিংহে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নেতৃত্ব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশাসন ব্যবস্থা সংক্রান্ত দক্ষতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল করাই আইজিএসএ-এর লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশনের উর্ধ্বতন সচিব এন এম জিয়াউল আলম। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে মন্ত্রী পরিষদের অতিরিক্ত সচিব ও পিফরডি-এর প্রকল্প পরিচালক সুলতান আহমেদ উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য রাখেন।
অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানান ব্রিটিশ কাউন্সিলের পক্ষ থেকে নিযুক্ত পিফরডি-এর প্রকল্প পরিচালক জ্যাসিকা ম্যাগসন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন যুগ্ম সচিব ও ময়মনসিংহের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নিরঞ্জন দেবনাথ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার বিষয়ক সচিব শেখ মুজিবুর রহমান, এনডিসি। প্রকল্পের কর্মকাণ্ড, লক্ষ্য ও সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন পিফরডি-এর টিম লিডার আরসেন স্টেপানায়ান। ফোরামে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান।
যেকোনো প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতার গুরুত্ব প্রসঙ্গে এন এম জিয়াউল আলম বলেন, “জবাবদিহিতা ছাড়া গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হয় না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে করে তারা দেশকে আপন মনে করতে পারবে। সুশাসন ও সামাজিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে পিফরডি প্রকল্প।”
সুশাসন ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিৎকরণের জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আহ্বান জানান পিফরডি-এর প্রকল্প পরিচালক সুলতান আহমেদ। তিনি আরো জানান, জনগণের অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশাসন ব্যবস্থা ছাড়া গণতন্ত্র মূলত ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে সুশাসন নিশ্চিৎকরণের জায়গাটি বেশ সংকটপূর্ণ বলে সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্ক করেন তিনি।
এদেশের মানুষের জন্য উক্ত প্রকল্পটি বেশ উপকারী হিসেবে আখ্যায়িত হতে পারে। সামাজিক জবাবদিহিতা পোষণ করতে হলে সেবাদানকারী ও গ্রহণকারী উভয় পক্ষেরই ইতিবাচক মনোভাব থাকাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন মো. মিজানুর রহমান।
আইজিএসএ-এর দ্বিতীয় ধাপে মূল বক্তব্য রাখেন এন এম জিয়াউল আলম। তিনি বলেন, “অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রশাসন ব্যবস্থা ও সামাজিক জবাবদিহিতা নিশ্চিৎকরণের ব্যাপারে বর্তমান সরকার বেশ তৎপর, আর তাই সরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগনের মধ্যে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস রয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, আইসিটি আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আইন কার্যকর করার মধ্য দিয়ে সরকার বাংলাদেশে অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রশাসন ব্যবস্থার পথ সুগম করেছে।”
দেশে অন্তর্ভূক্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিৎ করতে সরকার পাঁচটি সামাজিক জবাবদিহিতা সংক্রান্ত পদক্ষেপ বা এসএ টুলস (উপকরণ) গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে- দি ন্যাশনাল ইন্টিগ্রিটি ষ্ট্র্যাটেজি (এনআইএস)- ২০১২, দি রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট- ২০০৯, দি সিটিজেন চার্টারস (সিসি)-২০০৭, দি গ্রিভেন্স রেডরেস সিস্টেম (জিআরএস)-২০০৮ এবং দি অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স এগ্রিমেন্ট (এপিএ)-২০১৪-২০১৫। এতে করে সরকারি সিদ্ধান্তে জনগণের অংশগ্রহণ ও সেবাদান পদ্ধতি নিশ্চিৎ করা যাবে। স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং জনগণের অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে সরকারি সেবায় জবাবদিহিতা নিশ্চিৎ করতে উপরোক্ত উপকরণগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ময়মনসিংহে আয়োজিত ফোরামে প্রধানত জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে নাগরিক সংশ্লিষ্টতা ও সেবার মান তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের চাহিদা প্রসঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি নাগরিক সেবা প্রতিশ্রুতি (সিটিজেন চার্টার) ও অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা (গ্রিভেন্স রিডরেস সিস্টেম)-এর কার্যকরী প্রয়োগ সংক্রান্ত জ্ঞান ও দক্ষতার উপর জোর দেয়া হয়।
মূল বক্তব্যের পর কর্মশালার দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহণকারীরা দলগত কাজে অংশ নেন। জেলা, উপজেলা এবং ময়মনসিংহের বিভাগীয় পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এতে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ ফোরামে অংশ নেয়। পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ের উপর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নেন মিডিয়া, শিক্ষায়তন এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ।
অংশগ্রহণকারীদের মতে, সরকারি সেবাদানকারী ও সেবা গ্রহণকারীদের জন্য আইজিএসএ গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিৎ দলগত কাজ থেকে উঠে আসা তথ্য ও পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা। সামাজিক জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতার উপকরণগুলোর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও আইজিএসএ ফোরামের আয়োজন প্রত্যাশা করে অংশগ্রহণকারীরা।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন