রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঝুট কাপড়ে অর্থনৈতিক বিপ্লব

ঘরে ঘরে কারখানা ॥ কাজ করছেন নারী-পুরুষ সবাই

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

ঝুট কাপড়ে অর্থনৈতিক বিপ্লব

চলছে ঝুট কাপড় দিয়ে লেপের কভার তৈরির কাজ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বীরকুৎসা রেলস্টেশন সংলগ্ন গ্রাম দুর্লভপুর। গ্রামের ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে গার্মেন্ট ঝুট কাপড়ের লেপের কভার। এসব কারখানায় কাজ করছেন ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষসহ নানা বয়সী মানুষ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে এ কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। মাত্র কয়েক বছরে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে গ্রামের প্রতিটি পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। প্রায় সবাই এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। শুধু তাই নয়, প্রতি শীত মৌসুমে দুর্লভপুর গ্রাম ঘিরে চলে ৪০-৫০ কোটি টাকার ব্যবসা। ঝুট কাপড়ে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে শত শত নারী-পুুরুষের।

সরেজমিনে গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ঘরে ঘরে দিন-রাত চলছে সেলাই মেশিনের খট খট শব্দ। এক টুকরা ঝুট কাপড়ের সঙ্গে আরেক টুকরা জোড়া লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে লেপ কভার। গ্রামের অনেকেই জানান, এখানকার তৈরি ঝুট কাপড়ের লেপের কভারের চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। প্রতি শীত মৌসুমে রাজধানী ঢাকা, কুমিল্লা, পাবনা, শরীয়তপুর, যশোর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার এসে ঝুটের লেপের কভার কিনে নিয়ে যান। দুর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা মোবারক আলী জানান, তিনি আগে রিকশা-ভ্যান চালাতেন। তা দিয়ে সংসার চলত না। গ্রামে ঝুট কাপড়ের ব্যবসা শুরু হওয়ার পর ভাগ্য ফিরেছে তার। এখন স্বামী-স্ত্রী দুজনই কাপড় সেলাই করেন। কলেজছাত্র হামিদ সরকার জানান, তিনি নলডাঙ্গা শহীদ নাজমুল হক কলেজে পড়েন। পড়াশোনার পাশাপাশি সেলাই মেশিনে ঝুটের লেপের কভার বানিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি বাবা-মাকে সাহায্য করেন। স্কুলছাত্রী রুমা এবং কোহেলী খাতুন জানান, স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে সেলাই করে নিজের প্রাইভেট পড়ার খরচ জোগান। দুর্লভপুর গ্রামের গৃহবধূ রশিদা বেগম ও পুতুল রানী জানান, পুরো গ্রামের অধিকাংশ নারী এখন সেলাইয়ের কাজ করেন। কারও সংসারে অভাব-অনটন নেই। সেলাই শ্রমিক (দর্জি) আমজাদ হোসেন জানান, এই গ্রামে এখন কোনো বেকার নেই। কেউ কারখানায় সেলাই করছেন, কেউ বা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। খাজুরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভুট্টো জানান, দুর্লভপুর গ্রামের প্রায় চারশ ঘরে এখন সেলাই মেশিন রয়েছে। বাড়ির নারী-পুরুষ সবাই মিলে সেলাই কাজ করেন। নিম্নআয়ের মানুষ ছাড়াও মধ্যবিত্ত পরিবারের সবাই সেলাই করে বাড়তি আয় করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন মন্টু জানান, গত কয়েক বছরে এখানে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এখান থেকে মৌসুমে ৪০-৫০ কোটি টাকার কাপড় বেচাকেনা হয়। গ্রামে লেপ কভার কিনতে আসা দিনাজপুরের ফারুক, বগুড়ার সুশান্ত ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাবর আলী জানান, দামে কম আর টেকসই প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রতি শীতের সময় তারা এখান থেকে লেপের কভার কিনে নেন।

সর্বশেষ খবর