৩৯ ইটভাটার ৩৫টিতেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বৃক্ষ। সর্বনাশ হচ্ছে পরিবেশের। মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে কৃষির। ফসলের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। অনেকের শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। এ চিত্র গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইককান্দি সুকতাইল, জালালাবাদ ও চন্দ্রদীঘলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।
সরেজমিন পাইককান্দি ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে একটি ইটভাটায় দেখা গেছে, সেখানে এক কোনে অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে করাতকল। শ্রমিকরা কাঠ চেরাই করতে ব্যস্ত রয়েছেন। সেই কাঠ শ্রমিকরা পোড়ানোর জন্য ইটভাটার ক্লিনে সাজাচ্ছেন। কাঁচা ইটের ফাঁকে ফাঁকে সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে কাঠ। ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ ড্রাম চিমনি। যেখানে অনর্গল কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে এ গ্রামে ইটভাটার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখানে অন্তত ২৬টি ইটভাটা রয়েছে। একটি ভাটার গায়ে আরেকটি ভাটা। ইটভাটার গ্রাম হিসেবে এটি পরিচিতি পেয়েছে। ইটভাটায় এ গ্রামের কৃষি, পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে অনেকের শরীরে।
পুখুরিয়া গ্রামের এসবিআই ইটভাটার মালিক মো. সিরাজ মোল্লা বলেন, সদর উপজেলার পশ্চিম গোপালগঞ্জের পাইককান্দি, সুকতাইল, জালালাবাদ ও চন্দ্রদীঘলিয়া ইউনিয়নে ৩৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর ৩৫টিতেই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ১৮ হাজার ২০০ থেকে ১৮ হাজার ৭০০ টাকা দরে প্রতি টন কয়লা কিনে ইট পোড়াচ্ছি। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ালে খরচ অনেক কম হয়। স্টার ইটভাটার কর্মী রিজু মোল্লা বলেন, শুধু আমাদের ভাটায় নয়, এলাকার অধিকাংশ ভাটায় করাতকল রয়েছে। এসব করাতকলে কাঠ চেরাই করে ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার শেষ মৌসুমে এখন দেদার কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, জানান রিজু মোল্লা।
ওই ভাটার শ্রমিক মো. রাজু বলেন, আমরা ভাটার ক্লিনে (যেখানে ইট পোড়ানো হয়) কাঁচা ইট সাজাই। ইটের ফাঁকে ফাঁকে কাঠ সাজিয়ে দিই। এই কাঠ দিয়েই ভাটায় আগুন দেওয়া হয়। এ ভাটায় ড্রাম চিমনি দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। তবে এটি বৈধ না অবৈধ তা তিনি জানেন না। ইটভাটার শ্রমিক মো. হাসান বলেন, এখানে কাজ করে হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্য দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়েই পেটের দায়ে এখানে কাজ করি।
পুখুরিয়া গ্রামের কৃষক জমির আলী শেখ বলেন, জেলার মধ্যে আমাদের গ্রামে ইটভাটা সবচেয়ে বেশি। এখানে ২৬টি ইটভাটা রয়েছে। অধিকাংশ ভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন গাছ উজাড় হয়ে যচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের ফসলের ওপরও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিবেশ রক্ষায় আমরা তিন দফায় অবৈধ ১১টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছি। ছয়টি উচ্ছেদ করেছি। ১৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এক ভাটা মালিককে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরিবেশ, মানুষের স্বাস্থ্য ও কৃষির ক্ষতি করে এমন ইটভাটা চলতে দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে এসব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে।