পাঁচ মাস ধরে চক্ষুসেবা বন্ধ রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে। এতে ভোগান্তির শেষ নেই চোখের রোগীদের। জেলার অন্য সরকারি হাসপাতালেও (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) নেই চোখের ডাক্তার। বাধ্য হয়ে রোগীরা ছুটছেন বেসরকারি ক্লিনিকে। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। অনেকে স্থানীয় ডাক্তারের কাছে গিয়ে হচ্ছেন অপচিকিৎসার শিকার।
সূত্র জানান, রাজবাড়ীর ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালে দুজন চক্ষু চিকিৎসক ছিলেন। তখন এখানে মাসে গড়ে ২০০ চক্ষুরোগীর অপারেশন হতো। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুজন চিকিৎসকই একসঙ্গে বদলি হন। এর পর থেকে এখানে বন্ধ চক্ষু চিকিৎসা। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীতে পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। কোনোটিতেই নেই চক্ষু চিকিৎসক।
সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলায় চক্ষু কনসালট্যান্টের রুমে তালা। জরুরি বিভাগের পাশেই বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার। সেখানে চক্ষুরোগীরা পরামর্শ নেওয়ার জন্য টিকিট চাচ্ছেন। কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে ডাক্তার নেই। রোগী হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন চক্ষুরোগী বলেন, রাজবাড়ীর কোনো সরকারি হাসপাতালেই চোখের ডাক্তার নাই। এভাবে একটি জেলা চলতে পারে না। তাদের কয়েকজন বলেন, ‘আমাদের চোখের চিকিৎসার জন্য এখন ফরিদপুর যেতে হবে!’
বালিয়াকান্দি উপজেলার হাতিমোহন গ্রামের প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘চোখের সমস্যা নিয়ে প্রথমে বালিয়াকান্দি গিয়েছিলাম। সেখানে ডাক্তার নাই। এরপর একজন বললেন স্থানীয় ডাক্তারের কাছে যেতে। সেখানে না গিয়ে আমি ফরিদপুরে ডাক্তার দেখিয়েছি।’ বালিয়াকান্দির একজন পল্লী চিকিৎসক বলেন, ‘রাজবাড়ীর সরকারি কোনো হাসপাতালেই চোখের ডাক্তার নাই। অনেক চক্ষুরোগী আমাদের কাছে আসেন যারা দরিদ্র। আমরা চিকিৎসা দিতে চাই না। তারা (রোগী) বলেন জেলায় সরকারি ডাক্তার নাই। আমরা কোথায় যাব? বাধ্য হয়ে আমাদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।’ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জিয়াউল হাসান বলেন, ‘এখানে চিকিৎসকের ১৮টি পদ শূন্য। জানুয়ারি থেকে চক্ষু চিকিৎসক নেই। রোগী এসে ফিরে যাচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ সিভিল সার্জন এম এম মাসুদ বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেক চিকিৎসকের পদ শূন্য। কোনো হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসক নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসক আসার সম্ভাবনাও নেই।’ রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি জ্যোতি শঙ্কর ঝন্টু বলেন, ‘আমি মনে করি স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে যারা আছেন এটা তাদের ব্যর্থতা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অনেকে গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে সেবা নিচ্ছেন। এতে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগের দাবি জানান তিনি।