দেশের উত্তরের জেলাগুলোর সমতলে চা বাগানে ব্যাপকহারে কারেন্ট পোকা এবং ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে গাছে নতুন পাতা আসছে না। গাছের গোড়ায় পচন ধরছে। এ ছাড়া ছত্রাকের আক্রমণে পাতা পচে যাচ্ছে, যা অনেকটা মহামারি আকার ধারণ করেছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চায়ের উৎপাদন কমে গেছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা।
চা বোর্ড সূত্র জানান, এ বছর পঞ্চগড়ের ক্ষুদ্র চাষিরা কাঁচা চা পাতার ভালো দাম পাচ্ছেন। জেলা প্রশাসন, চা বোর্ড এবং ক্ষুদ্র চাষিদের কয়েক দফা সভার পর নির্ধারিত মূল্যে কারখানাগুলোয় কাঁচা চা পাতা সরবরাহ করতে পারছেন চাষিরা। এতে চা পাতার মান যেমন বেড়েছে, তেমন চাষিরাও লাভবান হচ্ছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে চা বাগানগুলোয় পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। বর্তমানে তা মহামারি আকার ধারণ করেছে। চাষিরা বলছেন, কারেন্ট পোকা এবং ছত্রাকের আক্রমণে চা গাছগুলোয় নতুন পাতা আসছে না। গাছগুলোর গোড়ায় পচনও ধরেছে। ছত্রাকের আক্রমণে পাতা পচে যাচ্ছে। ফলে কাঁচা চা পাতা উৎপাদন কমে গেছে। বাজার থেকে নানান প্রকারের কীটনাশক কিনে প্রয়োগ করলেও কোনো কাজে আসছে না। এতে একদিকে কীটনাশকে খরচ বেড়ে গেছে, অন্যদিকে উৎপাদন কমে গেছে। এতে চা চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলার মাঝিপাড়ার ক্ষুদ্র চাষি মনিরুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ‘এবার চায়ের দাম ভালো পাচ্ছি। কিন্তু পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে গেছে। কীটনাশকের দাম বেশি। নানান ধরনের পোকার আক্রমণে পাতা হচ্ছে না। ছোট থাকতেই পাতা পচে যাচ্ছে। ফলে উৎপাদন কমে গেছে। আগে আমরা ৪০-৪২ দিনে পাতা তুলতাম। এ বছর দুই মাসেও পাতা তোলা যাচ্ছে না। টি বোর্ড বা কৃষি অফিসের কেউ খোঁজখবর রাখেন না বা পরামর্শ দেন না।’ চা বোর্ড বলছে, ক্ষুদ্র চাষিরা কয়েক বছর ধরে কাঁচা চা পাতার ভালো দাম পাননি। এজন্য তারা চা বাগানের পরিচর্যা করেননি। অনেকে চা বাগান তুলেও ফেলেছেন। এ বছর তারা ভালো দাম পাওয়া শুরু করেছেন। অতিরিক্ত লাভের আশায় বেশি সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন। ফলে ছত্রাক এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। সচেতনতার অভাবে এ ঘটনা ঘটছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান বলেন, ‘এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র চা চাষিরা দীর্ঘদিন ধরেই অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে আসছেন। ফলে মাটির উর্বরতা কমেছে। অন্যদিকে চা গাছগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ বছর তাঁরা কাঁচা চা পাতার ভালো দাম পাওয়ায় অতিরিক্ত লাভের আশায় সার-কীটনাশক বেশি ব্যবহার করছেন। এতে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ফলনও কমে যাচ্ছে। আমরা চা বোর্ড থেকে চা চাষিদের সচেতন করার নানান উদ্যোগ নিয়েছি এবং তা অব্যাহত আছে।’