জনবল, অবকাঠামোসংকটসহ নানান সমস্যায় ধুঁকে ধুঁকে চলছে নরসিংদী সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। কাগজে কলমে ১০০ শয্যা হলেও বাস্তবে ৩০ শয্যার অবকাঠামো ও জনবল দিয়েই চালানো হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা চিকিৎসক ও নার্সদের। দীর্ঘদিন এভাবে চললেও ১০০ শয্যা হাসপাতালের জনবলকাঠামোর অনুমোদন মেলেনি বলে জানা গেছে। রোগী অনুযায়ী পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, নরসিংদী সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১৮০০ থেকে ২০০০ রোগী সেবা নিতে আসে। ফলে মেডিসিন, হৃদ, চর্ম, গাইনি, অর্থোপেডিক ও শিশু বিভাগে গড়ে একজন চিকিৎসককে ১৫০ থেকে ২ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। এতসংখ্যক রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে।
জানা গেছে, ১৯৬২ সালে ‘রুরাল হেলথ সেন্টার’ নামে ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে এর যাত্রা হয়। ১০ বছর পর এটি ২৫ শয্যাবিশিষ্ট থানা স্বাস্থ্য কমপেক্সে উন্নীত হয়। ১৯৭৬ সালে ৩১ এবং ১৯৮৪ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০০৩ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যার করা হয়। ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এর জনবলকাঠামোর অনুমোদন হয়নি, অবকাঠামোগত উন্নয়নও ঘটেনি। রুরাল হেলথ সেন্টারের অবকাঠামোর সঙ্গে জোড়াতালি দিয়ে কিছু কক্ষ বৃদ্ধি করে ১০০ শয্যার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ডাক্তারদের বসার জায়গাও নেই।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালটির ভবন সংস্কারের কাজ চলছে। ফলে ভর্তি রোগীদের অন্যত্র নিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। গাইনি ও মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর টিকিট কাউন্টারে অস্থায়ী বেড পেতে সেবা দেওয়া হচ্ছে। পুরুষ ওয়ার্ডের রোগীদের চিকিৎসা চলছে আরএমওর বাসভবনে। হাসপাতালে ল্যাব টেস্ট ও এক্স-রে সেবায়ও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। পর্যাপ্ত টেকনোলজিস্ট না থাকায় রোগী বাইরে গিয়ে টেস্ট করতে বাধ্য হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অভাবে হাসপাতালের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর। দুটি অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও নেই ড্রাইভারের অনুমোদিত পদ। একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, জরুরি মুহূর্তে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাওয়া যায় না। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক থাকেন না। বেশির ভাগ সময় গ্যারেজবন্দি থাকে অ্যাম্বুলেন্স। বাধ্য হয়েই রোগীর স্বজনদের অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে হচ্ছে।
আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদা গোলশান আরা কবির জানান, হাসপাতালটিতে এ মুহূর্তে ৩০ শয্যার হিসাবে চিকিৎসকের ২০টি পদ রয়েছে। কর্মরত আছেন ১৭ জন। নার্সের পদ রয়েছে ১৩৭টি। কর্মরত রয়েছেন ১৩১ জন। এ ছাড়া ওয়ার্ডবয়, ডোম, ক্লিনারের পদ রয়েছে ২৫টি। আছেন ২০ জন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালটিতে সংস্কারকাজ চলমান। তাই ভর্তি রোগীদের অন্যত্র নিয়ে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা সীমিত জনবল নিয়ে কাজ করছি।’