এক সময় উত্তরাঞ্চলের মানুষকে মঙ্গা এলাকার মানুষ বলা হতো। আশ্বিন ও কার্তিক মাসে মানুষের তেমন কোনো কাজকর্ম থাকত না। ফলে বাড়িতে অলস সময় পার করত এ অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ। আশ্বিন ও কার্তিক মাসে মানুষের অভাব-অনটনকে বলা হতো ‘মঙ্গা’। এখন আর আগের মতো এ অঞ্চলে ‘মঙ্গা’ নামে সেই শব্দটি কার্যকর নেই। কালের বিবর্তন ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিন দিন তা বদলে গেছে। উত্তর জনপদের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে কাটা শুরু হয়েছে আগাম জাতের ধান। এখন আর আগের মতো আশ্বিন-কার্তিক মাসে অলস সময় কাটাতে হয় না। কাজ করার জন্যই বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত আগাম জাতের ধানগুলো হলো- বিনা-৭, ব্রি-৩৩, ব্রি-৫৬, ব্রি-৬২, পূর্বাচী ও হাইব্রিড। জানা গেছে, আষাঢ় মাসের শুরুতেই অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে এ জাতের ধানের চারা লাগানো হয়। চারার বয়স ২৫ দিন হলে তার পর জমিতে রোপণ করা হয়। জমিতে রোপণের ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে ধান পাকা শুরু হয়। আর সেই ধান ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে কেটে ঘরে তোলা হয়। এখন আশ্বিন-কার্তিকেই যেন নবান্নের সাড়া পড়েছে কৃষকের ঘরে ঘরে। সেসব জমিতে আলু, শাখ, সবজি আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। রোগবালাই কম, একই জমিতে বছরে তিন থেকে চার ফসল আবাদ, ধানের দাম ও গোখাদ্য হিসেবে খড়েরও দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় খেতে আগাম জাতের সোনালি ধান। তা কাটতে ও মাড়াই করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের শ্রমজীবী ও কৃষকরা। যাদের ধান কাটা ও মাড়াই করা হয়েছে, তারা জমিতে নতুন ফসল আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারে এ জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমি। অর্জিত হয়েছে ৮৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমি। জেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইখুল আরেফিন বলেন, কৃষক আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমরাও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। আগাম জাতের ধান চাষ হওয়ায় বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আগাম জাতের ধান বিঘাপ্রতি ১৪ থেকে ১৫ মণ হয়। ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে এই ধান কেটে ঘরে তোলা যায়।