শীত মৌসুম শুরুর আগেই সাগর শান্ত থাকার সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মানব পাচারকারী চক্র। বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় পাচার চক্র সমুদ্রপথের এ রুটটিতে বেশি সক্রিয়। এ চক্র জিম্মিশালা হিসেবে টেকনাফের রাজাছড়ার গহিন পাহাড়কে বেছে নিয়েছে। এ ছাড়া বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া, বড়ডেইল ও গর্জনবাগান এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক গোপন বন্দিশিবির। এ চক্রের রয়েছে শতাধিক দালাল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এক মাসে ১৩টি অভিযানে ৪৭ পাচারকারীকে আটক করেছে। এ সময় ৩৪৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে; যাদের পাচার করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। তবে অনেক সময় যাত্রীরা দালালদের সঙ্গে মিলে যায়, যা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ উপকূলের পাহাড়ই পাচারকারীদের মূল আস্তানা। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ওই উপকূল থেকে পাচারের আগ মুহূর্তে ২৯ জনকে উদ্ধার করেছে বিজিবি। এ সময় তিন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. সলিম (৩৫), নুরুল আবছার (১৯) ও মনসুর আলম (২২)। ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, অভিযানের সময় পাচারকারীরা ওই ২৯ জনকে গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘটনাস্থল থেকে একটি মোটরসাইকেল, একটি ইঞ্জিনচালিত সাম্পান নৌকা ও একটি চাকু জব্দ করা হয়। একই দিন টেকনাফের রাজাছড়ার গহিন পাহাড়ে সশস্ত্র পাচারকারীদের গোপন জিম্মিশালা থেকে ছয়জনকে উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র ও গুলিসহ এক পাচারকারীকে আটক করা হয়। যদিও চক্রের আট সদস্য পালিয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া, বড়ডেইল ও গর্জনবাগান এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক গোপন বন্দিশিবির। ওই পাচারকারী চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন আবদুল আলী (বর্তমানে কারাগারে), মো. হোসেন, সাইফুল ও নিজাম। তাদের অধীনে কাজ করে শতাধিক দালাল। দালালদের মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মাঝিমাল্লা এবং কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। জানা গেছে, মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা পাচার চক্র সমুদ্রপথের এ রুটে সক্রিয় রয়েছে। তারা অসচ্ছল ও বেকার যুবকদের জীবন বদলে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১০-২০ হাজার টাকা নগদ ও বাকিতে ১-২ লাখ টাকার চুক্তিতে ফাঁদে ফেলছে। লেদা ডেভেলপমেন্ট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলম বলেন, মানব পাচার বন্ধ হচ্ছে না। সমুদ্র এখন শান্ত থাকায় রোহিঙ্গারা সুযোগ নিচ্ছে। জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজার উপকূলে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর প্রলোভনে রাখা ১,১৩৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ৫০৮ পাচারকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। এসব ঘটনায় উখিয়া ও টেকনাফ থানায় ৮৫টি মামলা করা হয়েছে। টেকনাফ থানার ওসি আবু জায়েদ নুর বলেন, ‘মানব পাচার রোধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। তবে অনেক সময় যাত্রীরা দালালদের সঙ্গে মিলে যায়, যা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’