আটোয়ারীতে তিন বছরের একটি শিশুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । আজ বুধবার কোর্ট হাজতে গিয়ে দেখা গেছে, শিশুটি মায়ের কোলে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাইনবোর্ড লাগিয়ে এক সাইকেল মেকারের দোকান ঘর দখল করে । অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিঁড়ে ফেলার অপরাধে দোকানের মালিক ও তার স্ত্রীর ভাইসহ সাত জনের নামে আটোয়ারী থানায় মামলা করে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ। মামলায় তিন বছরের একটি শিশুসহ ৪ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। শিশুটির নাম মামলায় উল্লেখ না থাকলেও তাকে তুলে আনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, সাইকেল মেকার হকিকুল ইসলাম (৪৮) প্রায় ২৭ বছর ধরে বোদা-আটোয়ারী সড়কের পাশে লীলার মেলা নামক স্থানে সাইকেল মেরামতের কাজ করে আসছে। ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত যায়গায় দোকানঘর তুলে ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি এই দোকান টি করছেন। সম্প্রতি দীর্ঘদিন তিনি চোখের অসুখে ভুগছিলেন বলে দোকানঘরটি বন্ধ ছিল। কয়েকদিন আগে আবার সাইকেল মেরামতের কাজ শুরু করবেন বলে তিনি দোকন ঘরটি নতুন করে মেরামত করেন। মেরামতের ৫/৬ দিন পর হঠাত্ করেই বলরামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য দোকানঘরটির সামনে সাইনবোর্ড তুলেন। তারা দোকান ঘরের টিনের দরজা কেটে ভেতরে বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙ্গিয়ে দিয়ে বাইরে তালাও লাগিয়ে দেয়। এই তালা ভেঙ্গে গত বুধবার হকিকুল ইসলাম দোকান ঘরে ঢুকেন। ওইদিনই দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ঘরে ঢুকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নিজেরাই ছিড়ে ফেলে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোস্তাকীন বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিড়ে ফেলার অভিযোগে হকিকুল ইসলামসহ সাত জনের নামে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ সন্ধায় হকিকুল ইসলামের তিন বছরের সন্তান রাহাত হাসানসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। তারা হলেন দোকানের মালিক হকিকুল ইসলাম, স্ত্রী সুলতানা বেগম (৪৫), ছোটভাই আব্দুল মোতালেব (৩৫) ও তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম ( ২৫)। লীলার মেলা বণিক সমিতির সভাপতি হবিবুর রহমানসহ আশেপাশের দোকানদাররা জানান, ‘হকিকুল ইসলাম ১৯৮৮ সাল থেকে এখানে দোকান করে আসছেন। গত কয়েকদিন আগে কাউকে কিছু না জানিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হকিকুলের দোকান দখল করে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয় এবং দোকানের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগিয়ে দেয়। গত কয়েকদিন আগে হকিকুল দোকান খুললে দুপুর ১২ বা সাড়ে ১২টার দিকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ওই দোকানের সামনে আসে। তাদের একজন নিজেই বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিড়ে ফেলে। পরে থানায় মামলাও করে।’
ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ঘটনার সময় পাশের দোকানেই বসে ছিলাম। এসময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী এসে হকিকুলের দোকানে ঢুকে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিড়তে শুর’ করে। বঙ্গবন্ধুর ছবিতে তারা পা দিয়ে লাথিও মারে। বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে নোংরা রাজনীতি ও জাতীর জনকের ছবি অবমাননা মেনে নেয়া যায় না। প্রয়োজনে এদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা কররো। এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তদন্ত বা সঠিক তথ্য না নিয়েই আসামীদের গ্রেফতার করেছে। কোর্ট হাজতে আজ বুধবার বিকালে হকিকুল ইসলাম জানান, ‘২৭ বছর ধরে এই স্থানে আমি দোকান করে আসছি। গতকাল এলাকার লোকজন তালা খুলে দিলে আমি দোকানে প্রবেশ করি। দুপুরের দিকে ছাত্রলীগ নেতারা এসে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিঁড়ে ফেলে এবং আমার নামে মামলা করে। পুলিশ আমার স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রী এমনকি তিন বছরের শিশু সন্তানকে তুলে এনেছেন। গতকাল সারারাত থানার হাজতে আমার শিশুটি চিত্কার করে কান্না করে। কিন্তু পুলিশ কোনো প্রকার খোঁজ নেয়নি।’ এদিকে স্থানীা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ এ ঘটনায় বাড়াবাড়ি করছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ভয়ে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। স্থানীয় সাংসদ নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘ পুজা মণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয়রা ঘটনাটি জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে ছাত্রলীগের অপরাজনীতি সত্যি দুঃক্ষ জনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।’
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ঘরটা পড়েই ছিল। এটা ইউনিয়ন পরিষদের যায়গা। ১ মাস আগে আমরা সাইনবোর্ড তুলেছি এবং তালা লাগিয়েছি। ঘটনার সময় আমি ছিলাম না । তবে শুনেছি হকিকুল ইসরাম তার পরিবার মিলে বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননা করেছে।’ আটোযারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহআলম জানান, ‘ শিশু গ্রেফতারের বিষয়টি জানি না । বাদীর নাম বলতে পারছি না। সাত জনের নামে মামলা হয়েছে । তদন্ত ছাড়াই ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ জেলা পুলিশ সুপার গিয়াসউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘শিশু আটকের বিষয়টি জানি না। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/২১ অক্টোবর ২০১৫/শরীফ