বগুড়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম। ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। মামলা আর গ্রেফতার আতংকে ছাত্রদল-শিবির নেতাকর্মীরা। জাতীয় ছাত্রসমাজসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো প্রেস রিলিজ নির্ভর হয়ে পড়েছে।
উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী সরকারী আজিজুল হক কলেজসহ স্বনামধন্য বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি চর্চার মধ্য দিয়ে তৈরী হয়েছে অনেক নেতৃত্ব যারা পরবর্তীতে জেলা ও কেন্দ্রের নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। একসময়ের তুখোড় নেতা তৈরী হয়েছে ছাত্ররাজনীতি চর্চার মধ্য দিয়ে। কিন্তু সেই ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম এখন চলছে ঢিমেতালে। ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হয়েছে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। চলতি বছরের ৭ মে জেলায় সম্মেলন হলেও ঢাকায় বসে নেতারা ১২ মে ৫ সদস্যর জেলা কমিটির নাম ঘোষণা করেন। অদ্যাবধি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হলেও ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব অনেক আগে থেকেই। সেই রেশ এই কমিটিতেও রয়েছে। সমপ্রতি সরকারী কমার্শিয়াল কলেজে পৃথকভাবে মিছিল সমাবেশ করেছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুসারী ছাত্র নেতারা। তবে ক্ষমতাসীন দল হওয়ায় দলীয় ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলো একসাথেই তারা পালন করে থাকে। শোকের মাসে একত্রে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রলীগ।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাঈমুর রাজ্জাক তিতাস জানান, বগুড়ায় ছাত্রলীগ অগে থেকেই সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী, জেলাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নিয়মিতভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে। খুব শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি ঘোষণা হবে। ছাত্রলীগে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। গণতান্ত্রিক ধারাই বগুড়া ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে, এক সময়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদল বগুড়ায় অস্তিত্ব সংকটে। দলীয় কোন্দল, গ্রুপিং, মামলা, গ্রেফতার আতংকে দলের নেতাকর্মীদের দেখা পাওয়া যায় না। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘসময় থেকে রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় বললেই চলে। কোনো কর্মসূচি এমনকি দোয়া মাহফিলেও তাদের দেখা যায় না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে বগুড়ায় ছাত্রদল সক্রিয় থাকলেও বিভিন্ন উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। বর্তমানের এখন অধিকাংশ নেতাকর্মী নিস্ক্রিয়। জেলা ছাত্রদলের হাতেগোনা কয়েকজন নেতাকর্মী ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে দলীয় কর্মসূচি দেখা যায় না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১০ সালের ৬ জুন জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা হয়। কমিটি ঘোষণার প্রায় আড়াই বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হওয়ায় গ্রুপিং চাঙ্গা হয়ে উঠে। বিভিন্ন উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে ছাত্রদল। জেলা ছাত্রদল সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক, যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শুভ, আজিজুল হক কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক শফিকুল ইসলাম শফিকের নেতৃত্বে পৃথকভাবে কর্মসূচিপালনসহ শহরের মূল দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে পৃথকভাবে মিছিল নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মামলাসহ দলীয় কোন্দলের কারণে জেলা সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষনেতাদের কোনো কর্মসূচিতে আর দেখা যায়নি।
জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম শুভ জানান, বগুড়ায় ছাত্রদল শক্তিশালী করতে তরুণ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে বগুড়া জেলা ছাত্রদল।
এছাড়া ছাত্রশিবির মামলা আর গ্রেফতার আতংকে গোপনে চালাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। মাঝে মাঝে প্রেস রিলিজ দিয়ে জানান দেয় তাদের কর্মকাণ্ড। অপরদিকে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান বিরোধি দল জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের জেলা ও সরকারী আজিজুল হক কলেজে আহবায়ক কমিটি থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে কোনো কার্যক্রম নেই। সংগঠনের কলেজ শাখার আহবায়ক সাখাওয়াত হোসাইন জনি জানান, জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ উপজেলা পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করতে নতুন করে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া জাসদ ছাত্রলীগ ৭ বছর ধরে একই কমিটি দিয়ে চলছে। কমিটি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে জাসদ ছাত্রলীগও।
বিডি-প্রতিদিন/২২ অক্টোবর ২০১৫/শরীফ