শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ গৃহবধূ সোনিয়া আক্তার (২০)। বাগেরহাটের কচুয়ায় গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার নয় দিন পর শনিবার ভোর ৫টার দিকে তিনি মারা গেছেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সোনিয়াকে এদিন ভোরে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে মারা যাওয়ার একদিন আগে সোনিয়া পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়ে যান। সেখানে তিনি তার মৃত্যুর জন্য স্বামী মন্টু আকনকে দায়ী করে গেছেন।
সোনিয়া আক্তার কচুয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মোজাহার শিকদারের মেয়ে এবং শহীদ শেখ আবু নাসের মহিলা ডিগ্রী কলেজের বিবিএ ২য় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। গত ২৬ নভেম্বর পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার রাজপাশা গ্রামে স্বামী মন্টু আকন নববধূ সোনিয়া আক্তারের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেন।
সোনিয়ার বাবা ভ্যানচালক মোজাহার শিকদার বলেন, মোবাইলে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার রাজপাশা গ্রামের রজব আলীর ছেলে মন্টু আকনের সঙ্গে সোনিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে ঈদের সময় সোনিয়া পালিয়ে গিয়ে মন্টুকে বিয়ে করে। কিন্তু মন্টুর আগে একবার বিয়ে হয়েছিল তা সে গোপন করে। এটি জানার পর সোনিয়ার সঙ্গে মন্টুর ঝগড়া হয়। এরই জেরে গত ২৬ নভেম্বর মন্টু সোনিয়ার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার শ্বশুরসহ বাড়ির লোকজন অগ্নিদগ্ধ সোনিয়াকে উদ্ধার করে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করা হয়। আগুনে সোনিয়ার শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা তার বাঁচার আশা ছেড়ে দেন। পরে সোনিয়াকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। শনিবার ভোরে অবস্থার অবনতি হলে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমশের আলী বলেন, গত ২ ডিসেম্বর পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানা পুলিশ সোনিয়া নামে এক গৃহবধূর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে বলে একটি বার্তা পাঠায়। আমরা সেই বার্তা অনুযায়ী শুক্রবার দুপুরে মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে তার জবানবন্দি গ্রহণ করেছি। জবানবন্দিতে অগ্নিদগ্ধ মেয়েটি তার স্বামী মন্টু তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন। সোনিয়ার মৃত্যুর পর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ ডিসেম্বর ২০১৫/ এস আহমেদ