বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের মানুষের সাথে প্রথম একই কন্ঠে জাতীয় সংগীত গাইলেন বিলুপ্ত ছিটমহলের হাজারো মানুষ। পঞ্চগড়ের গারাতি ছিটমহলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের বিজয় উৎসবে গলা ছেড়ে মহান এই সংগীতে কন্ঠ মেলালেন তারা।
বিলুপ্ত গারাতী ছিটমহলের বিজয় উৎসবের অনুষ্ঠানস্থলে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। ছিটমহলের নাগরিকরা ছাড়াও জেলার নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসেন। নারী, শিশু থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। মঞ্চে তখন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার 'সুরের ধারা'র শিল্পীরা প্রস্তুত। তাদের সাথে পঞ্চগড়ের বিপি উচ্চ বিদ্যালয় এবং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মঞ্চে। মঞ্চের সামনে হাজার হাজার দর্শকও প্রস্তুত। দুপুর ২ টা ৩৯ মিনিটে হ্যালিকপ্টার যোগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। এসেই মঞ্চে ওঠেন তিনি। এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পঞ্চগড় ১ আসনের সাংসদ নাজমুল হক প্রধান এবং পঞ্চগড় ২ আসনের সাংসদ নুরুল ইসলাম সূজন।
শুরুতেই উপমহাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে 'ধন ধান্যে পুস্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা'- গানটির সঙ্গে সুরের ধারার শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। এর পরেই অনুষ্ঠানে পৌঁছান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। শুরুতেই প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর ছিটমহলবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন বলেন, 'এতোদিন আপনাদের দেশ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেষ্টায় আপনারা অবরুদ্ধ ছিটমহল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তার নেতৃত্বে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ উন্নযনের রোল মডেল। আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করছে সেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। তারাই আজ বিদেশি হত্যা করছে। সাম্প্রদায়িক উগ্রতার সৃষ্টি করছে। ধর্মের নামে বুদ্ধিজীবী, লেখক থেকে শুরু করে মসজিদের মুয়াজ্জিন পর্যন্ত হত্যা করছে।'
এর পরেই মঞ্চে ঘোষণা আসে এবার জাতীয় সঙ্গীত। লক্ষাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে যায়। অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয় তখন। শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত। ঐতিহাসিক মুহূর্তে লাখো মানুষ প্রাণ খুলে গাইলেন প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত। বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিকরা প্রথম বিজয় উৎসবে আবেগী হয়ে পড়েন। চিৎকার করে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে থাকেন তারা। জীবনে প্রথম নিজের দেশের হয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন তারা। এসময় শিশুরাও আনন্দে মেতে ওঠে। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল আই। জাতীয় সঙ্গীত শেষে মঞ্চে আসেন ডাক ও টেলি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বিলুপ্ত ছিটমহলে গ্রামীণ ফোনের থ্রিজী নেটওয়ার্ক উদ্বোধন করেন।
বক্তাদের বক্তৃতা শেষে সুরের ধারার শিল্পীরা একে একে 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে', 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে', 'ও আমার দেশের মাটি', 'বিষম দৈরার মাঝে' গানগুলো পরিবেশন করেন। সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাঝেই সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কবিতা 'আমার পরিচয়' আবৃত্তি করেন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা জাগানো গান 'নোঙ্গর তোল তোল সময় যে হল হল' গানটি দিয়ে শেষ হয় ঐতিহাসিক এই অনুষ্ঠান।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ ডিসেম্বর ২০১৫/ এস আহমেদ