মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের নবীনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের ২য় তলার সিঁড়ি ভেঙে মোক্তার আলী নামের এক নির্মান শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহত মোক্তার আলী কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। শনিবার দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গত ২২ ডিসেম্বর ২য় তলার ওই সিঁড়ি ঢালাই করা হয়েছিল।
এ ঘটনায় ওই ভবন নির্মানে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থাণীয় ও অভিভাবকরা। নির্মানকাজে পর্যাপ্ত সিমেন্ট ও রড ব্যবহার না করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানান, পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৬৩ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্ধে গত বছরের মে মাস ভবন নির্মানে কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। কাজের প্রথম থেকে সিমেন্ট কম দেওয়া, দুর্বল ইট ব্যবহার করাসহ নানা অনিয়ম করলেও ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা কথা বলার সাহস পায়নি।
স্থানীয় কয়েকজন শ্রমিক ও শিক্ষকরা এ অনিয়মের প্রতিবাদ করলে কয়েকজন শ্রমিককে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এমনকি তাদের কয়েকদিনের পারিশ্রমিকও পরিশোধ করা হয়নি। শিক্ষকরা প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের সাথে ঠিকাদার পক্ষের লোকজনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র রাব্বি হোসেন জানায়, আমরা ক্লাসে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। আমরা খুব ভয় পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন ভূমিকম্প হয়ে সব ভেঙে যাচ্ছে।
জাহিদুর রহমান নামের এক অভিভাবক জানান, দুর্নীতি করে টাকা পয়সা খেয়ে ইঞ্জিনিয়াররা না দেখে এই বিল্ডিং বানাচ্ছে। নিষ্পাপ শিশুরা কোন পাপ করেনি, তাই বিল্ডিং চালু হওয়ার আগেই হয়ত এটা ভেঙে গেল। এই স্কুলের বিল্ডিং নতুন করে ভালোভাবে তৈরি করা না হলে আমাদের ছেলেমেয়েদের আর স্কুলে পাঠাব না।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি জাবের আলী বলেন, তিনি এই স্কুলের জমি দান করেছিলেন। স্কুলের ভবন তৈরি করার সময় দরপত্রের সিডিউল অনুযায়ী কাজ না করায় আমি প্রতিবাদ করেছিলাম এবং কাজ ঠিকমত দেখে নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগত খরচে দু'জন শ্রমিক রেখেছিলাম। তারপরও আমার কথা না মেনে তারা উল্টো নানারকম ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তাদের চাপে পড়ে আমি সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।
বিদ্যালয়ের নতুন সভাপতি সুমন আলী বলেন, অনিয়ম করে বিল্ডিং করা হয়েছে। এই ভবন নতুন করে পুনরায় করার দাবি করছি। তা না হলে স্থানীয় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এখানে লেখাপড়া করতে পাঠাবে না।
এলজিইডি'র গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুল হক বলেন, সিডিউল অনুযায়ী যে পরিমান সিমেন্ট দেওয়ার কথা ছিল তার থেকে অনেক কম দেওয়া হয়েছে। যে কারণে বালু, সিমেন্ট ও খোয়ার কংক্রিট জমাট বাঁধতে পারেনি। এ কারণে ধসে পড়েছে। তিনি আরো জানান, ২য় তলার এই সিঁড়িটি ঢালাইয়ের সময় তাদের কাউকে না ডেকেই ঢালাই করা হয়েছে। ফলে ওই কাজে সিমেন্টে যথেষ্ট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অনিয়মের ফলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই ভবন নির্মান কাজের ঠিকাদার ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক ওই ভবনের কাজ তিনি করেছেন বলে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তামান্না এন্টারপ্রাইজের চারটি কাজের মধ্যে নবিনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনসহ দুটি কাজ ঠিকাদার মোনায়েম হোসেন মুলাক করছেন।
এম এ খালেকের অভিযোগ অস্বীকার করার প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুমন আলী বলেন, ঠিকাদার মোনায়েম হোসেন মুলাক তার ব্যবসায়িক পার্টনার । এম এ খালেক এটা অস্বীকার করতে পারেন না।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মোনায়েম হোসেন মুলাক বলেন, শ্রমিকদের ভুলে সিঁড়ি ভেঙে গেছে। সিমেন্ট কম দিয়েছেন কেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রমিকরা সিমেন্ট বিক্রি করে খেয়েছেন। প্রকৌশলী ছাড়া ঢালাই করার কথা বললে তিনি বলেন, প্রকৌশলীসহ তিনি ওই দিন অন্য কাজে ছিলেন।
এ ব্যাপারে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) পরিমল সিংহ বলেন, বিষয়টি তিনি এখন পর্যন্ত জানতে পারেননি। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ