ছত্রাক বা লেট ব্লাইট প্রতিরোধী দুটি নতুন জাতের আলুর পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্র।
আশা করা হচ্ছে, ছত্রাকনাশক ছাড়াই 'অ্যালুয়েট' ও 'ক্যারোলাস' নামের দুই জাতের আলু চাষ সম্প্রসারিত হলে ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি আলুর উৎপাদন যেমন বাড়বে তেমনি কম খরচে লাভবান হবে আলুচাষীরা। একই সঙ্গে ছত্রাকনাশকের বিরূপ প্রভাব থেকে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষা পাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্র একই সঙ্গে কয়েক প্রকারের আলু লাগিয়ে নতুন এ দুটি জাতের আলুতে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেনি। অন্য জাতের আলু লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে পাতা মরে গেছে । কিন্তু অ্যালুয়েট ও ক্যারোলাস লেট ব্লাইটে আক্রান্ত হয়নি। এই আলুর পাতা তরতাজা এবং সজীব রয়েছে।
দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্র বলছে, দুই বছরের পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অন্য জাতের আলু প্রতি হেক্টরে ১৬ থেকে ১৯ মেট্রিক টন পর্যন্ত হয়। অ্যালুয়েট ও ক্যারোলাস প্রতি হেক্টরে ৩৫ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন হচ্ছে। অ্যালুয়েট লাল বর্ণের এবং ক্যারোলাস সাদা বর্ণের মধ্যে লাল চোখের। দুটিই খেতে সুস্বাদু। অতিমাত্রায় লেট ব্লাইট সহনীয় ওই দুই আলুর আবাদ দেশে ছড়িয়ে পড়লে ছত্রাকনাশক আমদানি করতে হবে না।
দেশে আলুর চাহিদা রয়েছে এক কোটি মেট্রিক টন। বর্তমানে দেশে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ লাখ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। প্রতি বছর আলুর এ রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রচুর ছত্রাকনাশক বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের পাশ্ববর্তি গ্রাম খাটুরিয়া সেন্টার পাড়ার আলু চাষীরা এই দুই জাতের আলু পরীক্ষামূলক চাষ করে সফল হয়েছেন। তারা দ্রুত এই আলুর বীজ কৃষকদের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানান। সেন্টারপাড়া গ্রামের আলু চাষি আক্কাস আলী (৫৫) বলেন, আমি ৩০ শতক জমিতে নিজ উদ্যোগে ওই দুই জাতের আলুর আবাদ করেছি। অন্য জাতের আলুতে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হলেও ওই দুই জাতের আবাদে কোনো ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হয়নি।
একই গ্রামের আব্দুল মান্নান জানান, অন্য আলুর থেকে এই আলুর ফলন বেশি। যত দ্রুত সম্ভব এই বীজ চাষিদের হাতে পৌঁছানো দরকার।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের 'অ্যালুয়েট' ও 'ক্যারোলাস' আলুর চাষ পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড.মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন। তিনি বলেন, দুই বছরের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ছত্রাকনাশক ছাড়াই এ দুটি জাতের আলুর ফলন ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এ আলুকে লেট ব্লাইট আক্রমণ করতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, লেট ব্লাইট (নাবি ধসা) আলুর একটি মারাত্মক রোগ। এ রোগের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০ শতাংশ আলুর ফলন নষ্ট হয়। গাছের বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ দেখা দিলে ৮০ শতাংশেও বেশি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
শীঘ্রই আরও উচ্চতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কৃষকদের হাতে এই আলু তুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান।
দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশিষ কুমার সাহা জানিয়েছেন, হল্যান্ড থেকে ওই দুই জাতের আলুর বীজ আমদানি করা হয়। গত বছর 'অ্যালুয়েট' ও 'ক্যারোলাস' জাতের আলুর প্রথম পরীক্ষায় ভালো ফল পাওয়ার পর এ বছরও পরীক্ষামূলকভাবে চাষীদের মাঝে দেয়া হয়েছে। দুই বছরের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ছত্রাকনাশক ছাড়াই আলু দুটির ফলন ভালো পাওয়া যাচ্ছে। লেট ব্লাইট প্রতিরোধী আলু দ্রুত কৃষকদের মধ্যে সম্প্রসারণ করা হলে ছত্রাকনাশকের ব্যবহার কমবে, পরিবেশদূষণ রোধ হবে, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, বাজারে স্বাস্থ্যসম্মত আলু সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
বিডি প্রতিদিন/১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা