বিলাসবহুল নয়, শুধু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতেই আজ পথে পথে ঘুরছেন এক অসহায় মা। মানুষিক ও শারিরীক ভারসাম্যহীন ৪ সন্তানের জননী রোকেয়া বেগম এখন পথের ভিখারী। সাথে সঙ্গী হয়েছেন ৩২ ও ৩৫ বছরের দুই মানুষিক প্রতিবন্ধী সন্তান সম্রাট ও মলি। ৩৭ বছরের আরও এক ছেলেকে বাড়িতে শিকলে বেঁধে রেখে সম্রাট ও মলিকে নিয়ে পেটের খুধা মিটাতে ভিক্ষা করতে বের হন তিনি। টাঙ্গাইলে নতুন বাসস্ট্যান্ডে সকাল থেকে সন্ধ্যা পযন্ত মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান রোকেয়া।
৩ সন্তানকে নিয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার নারান্দিয়া ইউনিয়নের কুরুয়া মিয়াপাড়া গ্রামে থাকেন রোকেয়া। স্বামী খন্দকার মজিবুর রহমানও দীর্ঘদিন ছিলেন মানুষিক ভারসাম্যহীন। কয়েক মাস আগে তাকেও হারিয়েছেন রোকেয়া। ৩৮ বছরের বড় মেয়ে মুন্নিকে অনেক আগে বিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর সেই মুন্নিও মানুষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। পরে স্বামী থেকে বিতাড়িত হয়ে এখন মায়ের সাথেই বসবাস করেন।
এদিকে বাড়িতে এক ছেলে ও মেয়েকে রেখেই সম্রাট (৩২) ও মলিকে (৩৫) নিয়ে ভিক্ষা করতে বের হন রোকেয়া। শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডেই বেশিরভাগ সময় থাকেন রোকেয়া। পথের মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে একটু সহানভূতি কামনা করেন। কখনও সেই সহানুভূতিতে মেলে কিছু টাকা, আবার কখনও মেলে না। সুঠম দেহের অধিকারি দুই সন্তান সম্রাট ও মলিকেও ঠিকমত খেতে দিতেও পারেন না রোকেয়া। তবু তাদের নিয়েই দিনভর পথে পথে ঘোরেন রোকেয়া, যেন বাড়িতে ফেরার সময় কিছু চাল আর সবজি কিনতে পারেন!
সম্রাট ও মলি প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তা দিয়ে সংসার চলেনা বলে জানান রোকেয়া বেগম। এদিকে সরকারের ১০টা কেজি চালের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে রোকেয়া বলেন, 'স্বামী নাই, অভাবের সংসার। এই পোলা মাইয়া নিয়া কি খামু? তাই ভিক্ষা করি। মানসে খারাপ কথা কয়, গালি দেয়, আমার অবুঝ পোলারে ধইরা মারে। তাও কিচ্ছু কইতে পারি না। সকালে আসি, সারাদিন বাসস্ট্যাডে রাস্তায় বয়া (বসে) থাকি। দিনে ভিক্ষা কইরা কিছু টাকা পাই, রাইতে বাড়িতে চাল-সবজি কিনা লইয়া যাই। কপালে যা জোটে তাই খাই। না জুটলে না খাইয়াই দিন পার করি।'
বিধবা বা বয়স্ক ভাতা দাবি করে রোকেয়া বলেন, আমার এই অবুঝ সন্তানদের নিয়ে যেন খেয়ে-পরে বাঁচতে পারি সরকারের কাছে এই দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শুকুর মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১০টাকা কেজি চালের সুযোগতো এখন নাই। বিধবা বা বয়স্ক ভাতার নতুন তালিকা হলে তখন তার নাম দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বিডি প্রতিদিন/৭ জুন ২০১৭/হিমেল