নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাজেদুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও কর্মচারীদের হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও নওগাঁ সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাজেদুর রহমান বেশিরভাগ সময়ই বিনা ছুটিতে কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের জন্য বরাদ্দ আসা এসি (এয়ারকন্ডিশন) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই নিজ অফিস কক্ষে লাগিয়েছেন। বিনা কারণে স্বাক্ষর না করায় অবসরপ্রাপ্ত এক পিয়ন পেনশন উঠাতে পারছেন না। সম্প্রতি অন্যায়ভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ করতে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে চিঠি দিয়েছেন। এ অবস্থায় দুই মাস ধরে ওই ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা উঠাতে পারছেন না।
ওই হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল করিম বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলার ওপর চিকিৎসকদের একটি প্রশিক্ষণের তিন লাখ টাকা বণ্টন না করে তিনি একাই আত্মসাৎ করেছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এ ধরনের বিভিন্ন অন্যায়-অপকর্মের প্রতিবাদ করায় আমি তার বিরাগভাজন হয়ে পড়ি। নিয়মিত অফিস করা সত্ত্বেও গত বছরের ৬ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাকে হাজিরা খাতায় কোনো স্বাক্ষর করতে দেননি। প্রায় এক মাস আমাকে অনুপস্থিত দেখিয়েছেন। এছাড়া বেতন শিটে স্বাক্ষর না করায় জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন উঠাতে পারিনি। পরে সিভিল সার্জন বিষয়টি হস্তক্ষেপ করলে বেতন উঠাতে পারি। আমার মতো এই হাসপাতালের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী তার দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
ধামইরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) শাহিনা সুলতানা বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাজেদুর রহমানের স্বাক্ষরিত সুপারিশ অনুযায়ী আমরা হাসপাতালের ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋনের জন্য আবেদন করি। ঋণ আবেদনটি অনুমোদন হওয়ার পর আমরা ঋণের প্রথম কিস্তির টাকাও (৭২ হাজার টাকা) উত্তোলন করি। অথচ পরবর্তীতে নিজের সুপারিশ করা ঋণকে অবৈধ উল্লেখ করে ওই ঋণর টাকা ফেরত দিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেন। আমরা ওই ঋণের টাকা ফেরত না দেওয়ায় অন্যায়ভাবে বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। সামনে ঈদ পরিবারের লোকজন আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বেতন-ভাতা না পেলে আমাদের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে যাবে।
হয়রানির শিকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্ডিওলজি টেকনিশিয়ান আবদুল হাই আল হাদি বলেন, মে মাসের বেতন পাইনি। ঈদ উপলক্ষে ২০ রমজানের মধ্যে জুন মাসের বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও আমরা ১৩ জন বেতন উঠাতে পারিনি। অথচ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকই বেতন-বোনাস উঠিয়ে ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেলেছেন। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় ঈদের কেনাকাটা দূরের কথা দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসার অডিটর হামিদুর রহমান জানান, গত ৩ জুন ধামইরহাট স্বাস্থ্য কর্মপ্লেক্সে ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাজেদুর রহমানের একটি চিঠি তার কাছে আসে। ওই ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ছয়জন নার্স রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী যাদের বেতন-ভাতা উঠাতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয় না। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ওই ছয়জন নার্সের বেতন শিট তিনি অনুমোদন করে দেন। এটা জানার পর গত ১০জুন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাজেদুর রহমান ফোনে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হত্যার হুমকি দেন। এ বিষয়ে পরদিন তিনি ধামইরহাট থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাজেদুর রহমানের সাথে কথা বলা হয়। নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান মাজেদুর রহমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন রওশন আরা খানম বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তাকে নিয়ে অনেক পেরেশানির মধ্যে আছি। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় তাকে শোকজ করা হয়েছিল। শোকজের উত্তর সন্তোজনক না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তও সম্পন্ন হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে শীঘ্র ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/২০ জুন, ২০১৭/ফারজানা