দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাইপাস মোড় থেকে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস যোগে ঢাকায় ফিরছেন হাজার হাজার যাত্রী। দূরপাল্লার নিয়মিত বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছাড়াও ঢাকার অভ্যান্তরীণ রুটের বিভিন্ন যাত্রীবাহী লোকাল মিনিবাস বনপাড়া বাইপাস মোড় থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মাইক্রোবাস ও ট্রাক যোগ হয়েছে ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের জেলায় যাত্রী পৌঁছে দেয়ার সেবায়। আর এই অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের সুযোগ নিচ্ছেন স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা।
যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করাসহ বাসের ছাদে চাপাচাপি করে উঠাচ্ছেন মহিলা, শিশুসহ সকলকে। মহাসড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন এসব যাত্রীরা। সড়কে ও মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট থাকলেও উৎকোচের বিনিময়ে যথারীতি চলছে এই নৈরাজ্য। এদিকে পরিবহন ব্যবস্থায় এই নৈরাজ্য তদারকি করতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দেখা যায়নি কোন তৎপরতা। ফলে দুর্ভোগ ও ছোট-বড় দূর্ঘটনার স্বীকার হয়ে ঢাকায় ফিরছেন হাজার হাজার যাত্রী।
উল্লেখ্য, বনপাড়া বাইপাস মোড়ে রয়েছে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের সকল পরিবহনের টিকিট কাউন্টার। নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম, বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর লালপুর, নাটোর সদরসহ পাশ্ববর্তী পাবনা জেলার চাটমোহর, ঈশ্বরদীর জনগন ঢাকার ফেরার উদ্দেশ্যে বনপাড়া বাইপাস মোড়ে জড়ো হয়। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের কারণে পরিবহন শ্রমিকরা ঢাকা ও গাজীপুর বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করে চালু করেছে বনপাড়া-ঢাকা যাত্রীসেবা। সেখানে ঢাকা ও গাজীপুরের অভ্যান্তরীণ রুটের বলাকা, স্বজন, ঠিকানা এক্সপ্রেস সহ বিভিন্ন মিনিবাসগুলোকে আনা হয়েছে যাত্রী বহনের জন্য।
শনিবার সকাল ৯ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট ছোট মিনিবাসগুলোতে যাত্রী উঠানো হচ্ছে। এসব বাসগুলোর দেখতে লক্কর-ঝক্কর। প্রয়োজনীয় কাগজ, ফিটনেস সার্টিফিকেট বা আদৌ লাইসেন্সধারী বা দক্ষ চালক আছে কিনা তা দেখার কেহ নেই। বনপাড়া হাইওয়ে থানার কর্তব্যরত কয়েকজন পুলিশকে ঘোরাঘুরি করতে দেখলেও কোন সার্জেন্টকে দেখা যায়নি। পরিবহন কাউন্টারেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে একেক পরিবহন একেক ধরণের ভাড়া আদায় করছে।
এদিকে বড়াইগ্রাম থানা মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে কয়েকটি বাস থানা পুলিশ আটকে রেখেছে। আটককৃত বাসের যাত্রী গার্মেন্টসকর্মী রানী বেগম জানান, বনপাড়া থেকে তারা ৪জন ২০০০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে উঠেছেন। বাসে উঠার সময় ডাইরেক্ট ও গেইট লক বললেও বাসটি বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে ভিতরে ও ছাদে যাত্রী তুলছে। এদিকে পুলিশ অনেকক্ষণ ধরে বাসটি আটকে রেখেছে। তবে ওই যাত্রীর সাথে কথা শেষ না হতেই বাসটি পুলিশের আটকমুক্ত হয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করে।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জি.এম শামসুন নূর জানান, ঢাকাগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে ও পরিবহনগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন পয়েন্টে থানার সার্জেন্ট ও সাব-ইন্সপেক্টরসহ পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। তবে, ভাড়া দ্বিগুণ ও লক্কর-ঝক্কর মিনি বাস সহ ট্রাক এবং বাসের ছাদে যাত্রী বহনের বিষয়ে জানালে তিনি জানান, আমি এখনই পুলিশ সার্জেন্টকে পাঠাচ্ছি। তিনি ব্যবস্থা নিবেন।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহরিয়ার খান জানান, পরিবহন খাতে কোন নৈরাজ্য থাকলে তা জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জানালে ভাল হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১ জুলাই, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-৭