কুমিল্লার হোমনায় বেড়ানোর জন্য সুদে নেয়া ঋণের টাকা শোধ করতে নবম শ্রেণির ছাত্রকে অপহরণের পর হত্যা করেছে একই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্ররা।
নিখোঁজের চারদিন পর জাহিদ হাসান নামের (১৪) ওই স্কুলছাত্রের লাশ তারই বিদ্যাপিঠ দুলালপুর চন্দ্রমনি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সেপটিক টেঙ্কি থেকে উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। জাহিদ হাসান উপজেলার দুলালপুর চন্দমনি বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র এবং সাফলেজি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. আক্তারুজ্জামানের ছেলে।
ঘাতকরা হলো উপজেলার ভিটি কালমিনা গ্রামের মো. মজিবুর রহমানের ছেলে স্থানীয় মাদ্রসার দাখিল পরীক্ষার্থী মো. জিহাদ হোসেন (১৯), একই গ্রামের মো. হাফেজ মিয়ার ছেলে ও দুলালপুর চন্দ্রমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মো. এমদাদ হোসেন (১৭) ও মুরাদনগর উপজেলার মটকিরচর ও বর্তমান হোমনা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাঘা বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. শাহজালাল মিয়ার ছেলে একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র খাইরুল ইসলাম (১৭)। গ্রেফতার তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, জাহিদ হাসান গত ৪ নভেম্বর বিকেলে তার মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে দুলালপুর বাজারে গিয়ে আর ফেরেনি। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুজি করে পরের দিন রবিবার হোমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন বাবা মো. আক্তারুজ্জামান। কললিস্ট ও ম্যাসেজের সূত্র ধরে বুধবার দুপুরে এলাকা থেকেই তিন ঘাতককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার ঘাতকরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, গত ৪ নভেম্বর মায়ের জন্য দুলালপুর বাজার থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় জাহিদ। বাড়ির পথে দুলালপুর উত্তর বাজার রাস্তায় আগে থেকে অপেক্ষায় থাকে তার তিন সিনিয়র ও পরিচিত ঘাতক। জরুরি কথা আছে বলে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে সু-কৌশলে জাহিদ হাসানকে দুলালপুর সিএজি অটো রিকশার স্ট্যান্ডের উত্তর পাশের নার্সারির পেছনে একটি বিল্ডিংয়ে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তার বুকের ওপর উঠে ও মুখ চেপে ধরে তিনজনে মিলে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। রাতেই ওই বিদ্যালয়ের টয়লেটের সেফটিক টেঙ্কির ভেতর ফেলে দেয়। হত্যার পর জাহিদের চাচা মাসুদ রানা কলির মোবাইলে পঞ্চাশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে মেসেজ পাঠায়। মেসেজের পর তাদের ভেতরে ভয় ডুকে- তারা ধরা পড়তে পারে। তাই তারা জাহিদের জামা কাপড়, লাশ বহনকারী ব্যাগ ও মুক্তিপণ চাওয়ায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আগুনে পুড়ে ফেলে। ঘাতক তিনজন ওই বিল্ডিংয়ে হারবাল ওষুধ বিক্রির ব্যবসা করতো। তারা পাঁচ হাজার টাকা সুদে এনে ঘুরতে গিয়ে ঋণী হয়ে পড়ে। ওই টাকা পরিশোধের জন্যই অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের কৌশল নেয়। সিরিয়াল দেখে ঘাতকরা এসব কৌশল শিখে বলেও তারা জানায়।
হোমনা সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান আজাদ ও হোমনা থানার ওসি রসুল আহমেদ নিজামী জানান, ঘাতকরা সবাই ছাত্র। ঘাতকদের মোবাইল ফোনে মুক্তিপণ চাওয়ার কল ও ম্যাসেজ লিস্ট ট্র্যাক করে বুধবার দুপুরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকেই গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্কুলের সেফটিক ট্যাঙ্কি থেকে বুধবার রাতে স্কুলছাত্র জাহিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় মামলা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন