আজ ৬ ডিসেম্বর ‘কলারোয়া পাক হানাদার মুক্ত’ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মাটি পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত হয়। কলারোয়ার আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। উল্লাসে ফেটে পড়েন মুক্তিকামী মানুষ। গৌরবোজ্জ্বল এদিনটি এবারও পালিত হচ্ছে যথাযোগ্য মর্যাদায়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়ার ৩৪৩ জন বীরসন্তান অংশ নেন। এদের মধ্যে শহীদ হন ২৭ জন।৮নং সেক্টরের অধীনে থাকা কলারোয়া মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রবাসী সংগ্রাম পরিষদ। এ অঞ্চলে পাক-বাহিনীর আক্রমণে সর্বপ্রথমে শহীদ হন মাহমুদপুর গ্রামের আফছার সরদার। এরপর এপ্রিলে পাকবাহিনী কলারোয়ার পালপাড়ায় হামলা চালিয়ে গুলি করে হত্যা করে ৯ জন কুমারকে। পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ পরিচালনা করেন কলারোয়ার দুই বীর যোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন ও আব্দুল গফফার। কলারোয়ায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি বড় ধরনের সম্মুখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এর মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বরের বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধে ২৯ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। শহীদ হন ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া ১৭ সেপ্টেম্বর কাকডাঙ্গার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকসেনারা কাকডাঙ্গা ঘাঁটি ছাড়তে বাধ্য হয়।
তবে এর আগে ২৭ আগস্ট উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়ন পাক হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত হয়। অক্টোবরের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা কলারোয়ার পাশ্ববর্তী বাগআঁচড়ায় দুঃসাহসিক হামলা চালিয়ে ৭ জন পাকিস্তানি রেঞ্জারকে (প্যারামিলিটারি ল' ইনফোর্সমেন্ট অরগান্যাইজেশন) হত্যা করেন। খোরদো এলাকাও বীরযোদ্ধারা মুক্ত করে ফেলেন। কলারোয়ার বীরযোদ্ধাদের ধারাবাহিক সফল অপারেশনের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকবাহিনী। তারা যখন বুঝতে পারলো যে তাদের পরাজয় নিশ্চিত, তখন তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে পাক হানাদার বাহিনী ৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কলারোয়ার বেত্রাবতী নদীর উপর লোহার ব্রিজটি মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ৬ ডিসেম্বর ভোরের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাযোগে নদী পার হয়ে এসে কলারোয়া বাজার নিয়ন্ত্রণে আনেন। এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের একেকটি সকল অপারেশনের মধ্য দিয়ে কলারোয়ার মাটি পাকবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় আজকের এই দিনে।
বিডি-প্রতিদিন/০৬ ডিসেম্বর, ২০১৭/মাহবুব