ডাক্তার সংকটে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কলারোয়া উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল বিভাগের চিকিৎসা সেবা। উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার দিয়ে জরুরী বিভাগের সেবা চালু থাকলেও কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারন মানুষ। এছাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলিতেও পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকা ও অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা।
বিপাকে পড়েছেন উপজেলার প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। এদিকে দীর্ঘ দিন এ সমস্যার সমাধান না হওয়ায় চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা অবিলম্বে ডাক্তার সংকটের সমাধানে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন সহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এক সময় ২০ জন ডাক্তার কর্মরত থাকলেও এখন ৩৪টি পদের মধ্যে ৩০টি পদই শুন্য। বাকি ৪ জন ডাক্তারের মধ্যে এমওডিসি ডাঃ মেহেরুল্লাহ গত ডিসেম্বরের ৯ তারিখ থেকে ছুটিতে এবং মেডিকেল অফিসার ডাঃ তন্দ্রা ঘোষকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২ জন ডাক্তার। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ শফিকুল ইসলাম ও মেডিকেল অফিসার ডাঃ গোপাল চন্দ্র জরুরী বিভাগ, বহির্বিভাগ ও ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন বলে জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ডিউটি, বহির্বিভাগে ও ভর্তিকৃত রোগিদের সেবা দিতে ২ জন ডাক্তারকে চব্বিশ ঘণ্টাই ডিউটি করতে হচ্ছে। একই সাথে চার জন উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন।
এদিকে, হাসপাতালের দ্বিতীয় শ্রেণির ২৬টি পদের মধ্যে ২টি পদ শূন্য রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ১২১টি পদের মধ্যে ৪০টি পদ শুন্য। চতুর্থ শ্রেণির ২৫টি পদের মধ্যে ৬টি পদ শূন্য রয়েছে।
অন্যদিকে, গত ১১ ডিসেম্বর প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাঃ শান্তি মোহন ভদ্র অবসরে গেছেন। ফলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালে গিয়ে প্রসূতি মায়েরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। পাশাপাশি এ্যানেস্থিশিয়া ডাক্তারসহ বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকায় ছোট-বড় অন্যান্য অপারেশনও রয়েছে বন্ধ। যে কারণে ক্লিনিকগুলো বেশ রমরমিয়ে ব্যবসা করছে।
এমন পরিস্থিতিতে দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত গর্ভবতী মায়েদের সিজারিয়ান অপারেশন কার্যক্রম ডাক্তার সংকটের কারণে প্রায় ৩ বছর বন্ধ রয়েছে। অযত্নে পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। সরকারের কয়েক কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, গত কয়েক বছর যাবত কলারোয়া সরকারি হাসপাতালটি ডাক্তার সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করা হলেও আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি বরং বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তারা বলেন, উপজেলার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতালটিতে আজ মাত্র ২জন ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে উপজেলার সাধারণ জনগণ। তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, কলারোয়া হাসপাতালে এখন চিকিৎসাসেবার জন্য কেউ যায়না। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রত্যয়ন নিয়ে থানায় মামলা করার জন্য কিছু মানুষ হাসপাতালের বেডে বসে থাকে। উপজেলার অসহায় মানুষের একমাত্র সরকারি চিকিৎসা সেবার ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি সচল করে উন্নত সেবা প্রদানের জন্য তারা সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কলারোয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ শফিকুল ইসলাম চিকিৎসা সেবার করুন অবস্থার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চাহিদার তুলনায় এত কম ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করা কঠিন। একদিকে অফিসিয়াল কাজ, অন্যদিকে জরুরী বিভাগ, ইনডোর-আউটডোর নিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে নিজেরাই বিপদে আছি। কোনটা ছেড়ে কোনটা করবো। আমাদের কি বিশ্রামের প্রয়োজন নেই? তিনি বলেন, ‘আমরাও চাচ্ছি পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক পদায়ন করা হোক যাতে রোগীদের সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা যায়।’
বিডি প্রতিদিন/৫ নভেম্বর ২০১৭/হিমেল