ঠাকুরগাঁওয়ে দুটি অবুঝ শিশু ও এক কিশোরকে আসামি করে মামলা দায়ের করায় আদালত প্রাঙ্গণে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হলেও দু’জন শিশুর মধ্যে একজন শিশু শ্রেণীর ছাত্র (৫) এবং অন্য শিশুটির বয়স ৮ বছর। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশু দুটিকে আসামি করায় মামলার বাদীকে তিরস্কার করেছেন বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ওয়ালিউল ইসলাম।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মামলার বাদী ঠাকুরগাও সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে নজরুল ইসলাম ও একই গ্রামের মৃত মহিরউদ্দিনের ছেলে আসামি সাজেদুর রহমানের মধ্যে জমি নিয়ে মামলা চলছে যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলা চলাকালীন গত ১৬ নভেম্বর ধান কাটা নিয়ে মারামারি, ভয়ভিতি ও ধান চুরির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে গত ১৯ নভেম্বর ১৩ জনকে আসামি করে বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ঠাঁকুরগাওয়ে নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা সাইফুল ইসলাম মামলাটি গ্রহণ করে সমন জারি করেন। মামলা নং ৩৭৫/১৭ । এতে ১৩ জন আসামির মধ্যে দুইজন প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়ুয়া মোলানী গ্রামের রশিদুলের শিশুপুত্র আশরাফুল (৫) ও একই গ্রামের ওবাইদুরের শিশুপুত্র উজ্জল (৮) এবং ইসমাইল নামে একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র রয়েছে। আদালত সকলের বিরুদ্ধে সমনজারি করলে বৃহস্পতিবার শিশু কিশোরসহ আসামিরা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো্হাম্মদ ওয়ালিউল ইসলামের আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে অন্য আসামিদের জামিন দিলেও তিন শিশু-কিশোরকে বিজ্ঞ শিশু ও কিশোর আদালতে প্রেরণ করেণ। সেই সঙ্গে আদালত বাদীকে তিরস্কার করেন।
মামলার আর্জিতে ৫ বছরের শিশু আশরাফুলের ও ৮ বছরের শিশু উজ্জলের বয়স দেখানো হয়েছে ২৩ বছর এবং কিশোর ইসমাইলের বয়স দেখানো হয়েছে ২১ বছর।
শিশু আশরাফুল মোলানী ঝাড়গাঁও মিয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্র এবং উজ্জল ৯২ নং ছেপরি কুরা সরকারী বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ও কিশোর ইসমাইল মোলানী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র।
আসামি পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট জাকির হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু বিবেচেনা করা হয়৷ আর সর্বনিম্ন ৯ বছর বয়সিদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া যায়৷ তবে সেক্ষেত্রে শিশু আইন, আলাদা অভিযোগপত্র, এজাহার এবং আদালত– এসব বিধান মানতে হবে৷ অবুঝ শিশুদের আসামি করায় আদালত বাদীকে তিরস্কার করেছে। ' তিনি আরো বলেন, মামলা গ্রহনের সময় আদালত সমন না দিয়ে তদন্ত দিলে হয়তো এ ঘটনা ঘটতো না।
এ বিষয়ে মামলার বাদী নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং মোবাইল বন্ধ করে দেন।
বিডি প্রতিদিন/৫ জানুয়ারী ২০১৮/হিমেল