মাদারীপুর সদর ও শিবচরে ১২ দিনের ব্যবধানে ত্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে। ত্রিপল মার্ডারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই সব এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে হামলা, পাল্টা হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গ্রেফতার ভয়ে দুই ইউনিয়ন এখনো পুরুষ শূন্য।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়াখন্ড ইউনিয়নের মৃধা কান্দি গ্রামের আলেম মৃধার সাথে একই বাড়ির জলিল মৃধার দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জের ধরে রবিবার সকাল ১০টার দিকে দু‘পক্ষের নারী-পুরুষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দু‘পক্ষের ধ্বস্তাধ্বস্তির সময় প্রতিপক্ষের ধাক্কায় আলেম মৃধার স্ত্রী সর্ব বেগম গাছের শিকড়ের উপর পড়ে যান। পরিবারের লোকজন তাকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে মাদারীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির মোয়াজ্জেম মোল্লা শনিবার রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। ঝাউদি এলাকা দিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে এলোপাথারী কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা দৌড়ে এসে তাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ফরিদপুর নেয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। মোয়াজ্জেম মোল্লা হত্যার জেরে রবিবার কুলপদ্মী এলাকায় প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা এলাকার প্রায় ২০/২৫ বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
অন্যদিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সাহেব আলীর সাথে সদর উপজেলার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান এজাজুর রহমান আকনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকালে মাদারীপুর শহরে আসার পথে বাংলা বাজার এলাকায় সাহেব আলীকে (৫৫) কুপিয়ে গুরুতরভাবে জখম করা হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে সাহেব আলীর অবস্থার অবনতি হলে বিকেলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান।
এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে দফায় দফায় হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। উত্তেজিত জনতা এলাকার অর্ধশত বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। সাহেব আলী হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো শহর।
মামলার পরে গ্রেফতার আতঙ্কে দুই ইউনিয়নের সহস্রাধিক পুরুষ মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি কামরুল হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন শান্ত এবং এ সব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখন পর্যন্ত কালিকাপুরের মামলায় ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে।’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন