ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পরিকল্পিতভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সারা দেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। হত্যাকারী ও এ ঘটনায় সহায়তাকারীদের প্রতি সর্বত্র ধিক্কার ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে হত্যা মামলা দায়ের হওয়ায় পাঁচ আসামিসহ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার ঘনিষ্ঠরা সুযোগ পেয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা হন্যে হয়ে তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে।
পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নুসরাতের ভাই নোমানের দায়ের করা মামলার নামীয় আসামিরা হলেন- অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার, পৌর কাউন্সিলর মকসুদুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের।
এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনও পলাতক রয়েছেন- সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের ওই মাদ্রাসার ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামিম, হাফেজ আবদুল কাদের ও নুর উদ্দিন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রেফতার ৯ আসামির মধ্যে পাঁচজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পিবিআই কর্মকর্তারা। সব শেষ বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (বরখাস্ত) এস এম সিরাজ উদ দৌলার ভায়রার মেয়ে (আলিম পরীক্ষার্থী) উম্মে সুলতানা পপি এবং সিরাজের ঘনিষ্ঠ ছাত্র জোবায়ের আহমেদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রাফির শরীরে আগুন দেওয়ার পরও নূর উদ্দিন, মাকসুদ আলম, শামীমসহ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা সোনাগাজী শহরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেরিয়েছে। সময় পেয়ে তারা দু-তিন দিন পর গা ঢাকা দেয়।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা, সোনাগাজী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, ‘মামলা হওয়ার পর আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি। তিনজন এজাহার নামীয় আসামিসহ ৯ জন ধরা পড়েছে। অন্য আসামিরা আগেই পালিয়েছে। আমাদের কোনো অবহেলা ছিল না।’
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। এসময় কৌশলে তাকে ছাদে নিয়ে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থেকে বুধবার ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে মারা যান নুসরাত। মৃত্যুর আগে তিনি লাইফসাপোর্টে ছিলেন।
এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এ মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দিয়ে আসছিলেন অধ্যক্ষের লোকজন। এরই একপর্যায়ে ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম