ধামরাইয়ে গাওইয়াল এলাকার তানিয়া নামে এক মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অপবাদে নুরুল ইসলাম ও তার মাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয় তাদের। এরপর পুলিশ তাদের ধামরাই সরকারি মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান বলেন, সোমভাগ ইউনিয়নের থেকে বাড়ি ফেরার পথে গ্রামের রাস্তা থেকে শহিদুল ইসলাম ও তার লোকজন নুরুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যায়। তানিয়া অভিযোগ করেন যে তাকে কুপ্রস্তাব দেয় নুরুল। এই অপবাদে তার উপর চালানো হয় নৃশংস নির্যাতন। চোখ বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয় তাকে। এদিকে খবর পেয়ে তার মা ঘটনাস্থলে আসলে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। নির্যাতনের পর আধমরা অবস্থায় তুলে দেওয়া হয় ধামরাই থানা পুলিশের কাছে।
সোমবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যার আজাহার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই অপবাদ দিয়ে মা ও ছেলেকে অমানসিক নির্যাতন করা হয়।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, সোমভাগ ইউনিয়নের বানেশ্বর গ্রামের আসলাম হোসেনের স্ত্রী তানিয়াকে একই গ্রামের আদম আলীর ছেলে তিন সন্তানের জনক ও সৌদি প্রবাসী স্ত্রীর স্বামী নুরুল ইসলাম (৪৫) দীর্ঘদিন ধরে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে।
এ নিয়ে আসলামের বাড়িতে সালিশ বৈঠক বসে। সালিশে নুরুল ইসলাম তানিয়াকে ধর্ষণ চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করা হয়। তাই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এতে জয়পুরা গ্রামের আলামিন হোসেন, গাওয়াইল গ্রামের আবদুর রফিক, লুৎফর রহমান, আবদুল হামিদ মোল্লাসহ পাঁচ সদস্যের জুরি বোর্ড গঠন করা হয়। জুডি বোর্ডের মাধ্যমে নুরুল ইসলামকে ১০১টা জুতাপেটা ও গলায় জুতার মালা পড়িয়ে গ্রাম ঘুরানোর রায় দেওয়া হয়। রায় অনুযায়ী বাস্তবায়নও করা হয়। এসময় নুরুল ইসলামের মা ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ।
সালিশ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কুল্লা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় শনিবার সকালে নুরুল ইসলামের মেয়ের জামাই সোমভাগ ইউনিয়নের দেপাশাই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সোহাগ মিয়া বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ দীপক চন্দ্র সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই ঘটনায় থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয় এবং ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে জন্য বিভিন্ন এলাকার অভিযান চলছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল