ঋতুপর্ণা চাকমা। দুর্গম পাহাড়ের গিরিপথ বেয়ে উঠে আসা এক উজ্জল নক্ষত্র। বুকে অতল বেদনার ভার বয়ে স্নায়ুচাপ ঠিক রেখে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে চলেছেন এই পাহাড় কন্যা। চাঞ্চল্যে ঋতুপর্ণা উচ্ছ্বল ঝর্নার মতো, খেলার মাঠে চাপের মুখে যেনো অটল পাহাড়। মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে পারছেন ঠিকমতো, তিন বছর আগে মারা গেছে একমাত্র ভাই; সংসারেও আছে টানাটানি। এসব কিছু সামলেই ছুটছেন ঋতুপর্ণা।
দেশের জন্য একের পর এক গৌরবগাঁথা বয়ে আনছেন ঋতুপর্ণা। তার জাদুকরি খেলা এখন দেশের বাইরেও আলোচনায়। তাই ঋতুপর্ণার জন্মস্থান পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের গর্বও দ্বিগুণ। এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে ঋতুপর্ণার জোড়া গোলে স্বাগতিক মিয়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ায় উচ্ছ্বসিত পাহাড়বাসী।
রাঙামাটি জেলার দুর্গম উপজেলা কাউখালীর ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের পাহাড়ি পল্লীতে জন্ম ঋতুপর্ণা চাকমা। বাঁ পায়ে ঋতুর ট্রেডমার্ক গোলে মোহিত হয়েছে সবাই। মিয়ানমারের বিপক্ষে একাই জোড়া গোল করেন ঋতুপর্ণা চাকমা। তার জাদুকরি পারফরম্যান্সে আনন্দে ভাসছেন তার মা, আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী।
মেয়ের এমন জয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত মা বসুবতি চাকমার আনন্দের কমতি নেই । তিনি বলেন, আর্শীরবাদ করি আমার মেয়ে দেশের জন্য আরও সুনাম বয়ে আনুক। দারিদ্র্যের কারণে মেয়েকে ভাল কোন বিদ্যালয়ে পড়াতে পারিনি। কিন্তু রাঙামাটির প্রত্যন্ত বিদ্যালয়ে পড়া লেখাপড়ার সূত্রে এখন এতো বড় খেলোয়াড় হয়েছে। এটা আমার জন্য খুবই গর্ব। ঋতুপর্ণার বাবা বেঁচে থাকলে সেও অনেক আনন্দিত হতো।
অন্যদিকে বোনের জয়ের আনন্দ থাকলেও চোখে মুখে মলিনতা ঋতুপর্ণা বড় বোন পাম্পী চাকমার। তিনি বলেন, আমার বোন দেশের নাম উজ্জ্বল করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু আমার মা মৃত্যু পথযাত্রী। মায়ের ব্রেস্ট ক্যান্সার। টাকার জন্য উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার যদি আমাদের কোন চাকরি ব্যবস্থা করে দিত তাহলে মায়ের সংসারের হাল ধরতে পারতাম।
এদিকে ঋতুপর্ণা চাকমার জোড়া গোলের আনন্দে ভাসছে রাঙামাটি মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। কারণ এ বিদ্যালয়ে পড়া লেখা করতেন ঋতুপর্ণা। ঋতুপর্ণার এমন অর্জনে গর্বিত তার শিক্ষক বীর সেন চাকমা। মূলত তার হাত ধরে পাহাড় রত্ন ঋতুপর্ণা চাকমার ক্রীড়া অঙ্গণের যাত্রা।
রাঙামাটি মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীর সেন চাকমা বলেন, আমি আশা করেছিলাম ২০২৬ এএফসি নারী এশিয়ান কাপে ঋতুপর্ণা চমক দেখাবে। এবং সে দেখিয়েছে। কারণ ঋতুপর্ণার খেলায় অন্যরকম জাদু আছে। সে মন দিয়ে খেলে। তার মধ্যে চেষ্টা আছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল