ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা খরস্রোতা নদী নাগধরা বর্ষাকালে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। একটি ব্রিজের অভাবে এই নদীতে তিনজনের প্রাণহানিসহ প্রতিনিয়ত অসংখ্য দুর্ভোগের ঘটনা ঘটছে। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার পূর্ব নড়াইল টু কাওয়ালিজান সড়কের গা ঘেঁষা বয়ে যাওয়া এই নাগধরা নদীতে একটি ব্রিজের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ নদী পারাপারের সময় কয়েক বছর আগে মাছাইল গ্রামের কুমেদ মুন্সীর ছেলে হাশেম, পূর্ব নড়াইল গ্রামের পালকপিতা আবাল হোসেনের ছেলে তাহের ও নড়াইল গ্রামের জালালের ঝি জামাই বারেকের মৃত্যু হয়েছে। গরুর লেজ ধরে নদী পারাপারের সময় ডুবে এদের মৃত্যু হয়।
নাগধরা টু কাওয়ালিজান সড়কে নড়াইল, মাছাইল, কুমুরিয়া, কাওয়ালিজান, গোপীনগর ও কালিয়ানিকান্দাসহ প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ চলাচল করে থাকেন। শুক্রবার সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে কথা হয় ভুক্তভোগী অসহায় মানুষের সাথে।
নড়াইল গ্রামের সাঈদুল ইসলাম বলেন, এই নদী পার হতে নৌকাই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। কয়েকদিন আগে নৌকায় উঠার সময় পিছলিয়ে পড়ে আমার মা’র ডান হাত ভেঙে গেছে।
খালপাড় গ্রামের আব্দুল হালিম জানান, কয়েক বছর আগে এই নদীতে হাশেম, তাহের ও বারেকের মৃত্যু হয়েছে। গরুর লেজ ধরে নদী পার হওয়ার সময় লেজ ছুটে নদীতে ডুবে এরা মারা যায়। এছাড়া কত গরু বাছুর যে মরছে এর কোন হিসাব জানা নেই। একটা ব্রিজ থাকলে হয়তো এদের এভাবে মরতে হতো না।
একই গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার মুন্সির ছেলে আব্দুল আউয়াল বলেন, রাত ১১টা/১২টা বেজে গেলে আমাদের আর এই নদী পার হওয়ার উপায় থাকে না। কেউ অসুস্থ হলে তখন কোন মসজিদে বা আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটাতে হয়।
একই গ্রামের আব্দুল কাদির বলেন, ''নিজেরা তো পড়াশোনা করতে পারি নাই, পোলাপান লইয়াও বিপদে আছি।''
নাগধরা নদীর উত্তর পাড়ে প্রায় দুইশ' পরিবারের বসবাস থাকলেও স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও এখানে নেই কোন একটি স্কুল বা মাদ্রাসা। পূর্ব নড়াইল গ্রামের কৃষক আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ আক্কু বলেন, নাগধরা নদীর উত্তর পাড়ে যেসব জমিজমা আছে এর অধিকাংশ কৃষকের বাড়ি নদীর দক্ষিণ পাড়ে। আমার নিজের ওখানে প্রায় ৪০ একর জমি রয়েছে। নৌকা দিয়ে এসব জমির ফসল ঘরে তুলতে নৌকাডুবিসহ কত যে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা বলে বুঝানো যাবে না।
থল এলাকার মুনসুর আলী বলেন, এখানে একটা ব্রিজ নির্মাণ হলে প্রায় ১০ গ্রামের মানুষের যাতায়াতসহ শিক্ষাদীক্ষা ও ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধা বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব