করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে নাটোর জেলার ছয়টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত ২০০ নকল নবিশরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। মজুরি ভাতা না পেয়ে সরকারি অফিসে চাকরি করেও পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক পাওয়া কর্মরত ২০০ জন নকল নবিশ। কবে নাগাদ তাদের পারিশ্রমিকের টাকা পাবেন তারও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় খাত সাব-রেজিস্ট্রি অফিস । যেখান থেকে প্রতি বছরই হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে সরকার। এ রাজস্ব আদায়ে ও সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে নকল নবিশরা (মোহরার)। যারা দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পর বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ (সংরক্ষণ) কাজ ও নকল দলিল প্রদানে মূল সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করে থাকেন।
নকল নবিশদের চাকরি স্থায়ী করার সরকারিকরণের আশায় দীর্ঘ দিন অনিশ্চিয়তার মধ্য দিয়ে দিন পার করলেও করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে নিজেদের আর খাপ খাওয়াতে পারছেন না তারা।
নকলনবিশেরা জানান, আইন মন্ত্রনালয়েরর অন্তর্গত রেজিষ্ট্রেশন বিভাগের আওতায় সমগ্র দেশের মহাগুরুত্বপূর্ণ জমির স্থায়ী রেকর্ডের কাজ করেন এবং নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ভিন্ন ভিন্ন স্মারকের ভিত্তিতে সরকারি বালাম লেখার কাজে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত। তাদের স্থায়ী কোন বেতন নেই, সরকারি বালামের প্রতি পাতা হিসেবে ২৪ টাকা হারে সরকারিভাবে পারিশ্রমিক পান। গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে অদ্যবধি অফিস বন্ধ থাকায় তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ২০০ নকলনবীশ পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
নকল নবিশ এসোসিয়েশন নাটোর জেলার সভাপতি আদিলুর রহমান জানান, এমনিতেই তাদের বেশির ভাগ নকল নবিশের ৮-৯ মাসের লেখনি বাবদ মজুরী যে পাওনা রয়েছে। তার উপর মার্চ মাস থেকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকায় থেকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকায় লেখনির অর্থ না পেয়ে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। সরকার করোনার কারণে যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে থেকে যৎসামান্য নকলনবীশদের জন্য বরাদ্দ দিত, তবে দেশের নকল নবিশরা একটু হলেও রক্ষা পেতো। পরিবার নিয়ে খেয়ে দেয়ে বাঁচতো। এখনো তারা কোন প্রকার খাদ্য সহায়তা পাননি ।
নকল নবিশ এসোসিয়েশন নাটোর জেলার সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনজুর রহমান জানান, তারা ছাড়া সরকারি দপ্তরে নিয়োজিত সকলই সরকারের কাছ থেকে বেতন ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু তারা কর্মহীন হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে দিনাতিপাত করছেন তাদের সংসার কিভাবে চলছে কেউ তা খোঁজ নেয় না। এ উপজেলার নকল নবিশদের বেশির ভাগ পরিবার খেয়ে না খেয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন । না পারছি হাত পাততে, না পারছি ন্যায্য পাওনা আদায় করতে।
দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে জেলা সহ দেশের নকল নবিশদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ