২৯ নভেম্বর, ২০২০ ১৩:০৬

বাগেরহাটে শিশুকে অপহরণ করে হত্যা, ৩ জনের যাবজ্জীবন

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটে শিশুকে অপহরণ করে হত্যা, ৩ জনের যাবজ্জীবন

পুলিশের সাথে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিরা।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামে ৩ মাসের শিশু আব্দুল্লাহকে অপহরণ করে মুক্তিপণ নিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

রবিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বাগেরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল- ২ এর বিচারক জেলা জজ মো. নূরে আলম এ রায় দেন।

রায় প্রদানের সময় আসামিরা কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আসামিরা হলেন-মো. হৃদয় ওরফে রাহাত হাওলাদার (২১), মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার (২২) ও মো. ফায়জুল ইসলাম (২৮) । তাদের সবার বাড়ি মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামে।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১১ মার্চ রাত ৩টার দিকে মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামের রেশমা বেগম তার ৩ মাসের শিশু আব্দুল্লাহকে বুকের দুধ খাইয়ে স্বামী মো. সিরাজুল ইসলাম সোহাগের সাথে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুমন্ত মা-বাবার কোল থেকে রাত সাড়ে ৩টার দিকে দুর্বৃত্তরা শিশুকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ঘুম থেকে জেগে তারা দেখতে পান বিছানায় শিশু আব্দুল্লাহ নেই। ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও নেই। জানালা ও দরজা খোলা রয়েছে। ঘরের অন্যান্য রুমের সকল দরজা বাইরে থেকে আটকে রেখেছে দুর্বৃত্তরা।

দুধের শিশুটিকে কীভাবে অপহরণকারীরা নিয়ে গেছে কেউ বুঝতেই না পেরে পুলিশকে খবর দেয়। ওই দিনই অপহৃত শিশুটির বাবা বাদী হয়ে মোরেলগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে মামলা দায়ের করে। পরে শিশুটির মুক্তির জন্য মোবাইল ফোনে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা। মুক্তিপণের দাবিতে করা মোবাইল ফোনটির সূত্র ধরে শিশুটিকে উদ্ধারে পুলিশ অভিযান শুরু করে।

এই সময়ের মধ্যে শিশুকে ফিরে পেতে বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম সোহাগ অপহরণকারীদের চাহিদা মতো ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণও পরিশোধ করে দেয়। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে প্রধান আসামি মো. হৃদয় ওরফে রাহাত হাওলাদারসহ অন্য আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

ঘটনার ৭ দিন পর  প্রধান আসামি মো. হৃদয়ের দেখানো মতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামের কাচারিবাড়ি এলাকার একটি মৎস্য খামারের টয়লেটের শেফটি ট্যাংকের ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোরেলগঞ্জ থানার এসআই মো. আব্দুল মতি দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে প্রধান আসামি মো. হৃদয়সহ ৩ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত ২৫ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ৩ ঘাতককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

মামলার বাদী শিশুটির বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম সোহাগ, মা রেশমা বেগম ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী এপিপি রণজিৎ কুমার মণ্ডল রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে আসামি পক্ষের কৌশলী মো. এনামুল হেসেন জানান, তার মক্কেল আদালতে ন্যায় বিচার পায়নি। সেকারণে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর