ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢেকে থাকা দেড়শ বছরের পুরনো পদ্মা চর উদ্ভাসিত হলো বিদ্যুতের আলোয়। স্বপ্ন পূরণ হলো কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর চিলমারী ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষের। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় এই চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা।
রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল প্রায় দেড়শ বছর আগে জনবসতি গড়ে ওঠে। এ চরাঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এসব গ্রাম পদ্মা নদীর কারণে মূল ভু-খণ্ড থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। বর্ষাকালে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে নৌকাযোগে যাতাযাত সুবিধা থাকলেও শুকনো মৌসুমে এসব অঞ্চলে যাতায়তে নানা বিড়াম্বনা দেখা দেয়। গ্রীষ্ম মৌসুমে চারিদিকে শুধু ধু-ধু বালুচরই চোখে পড়ে। এ সময় চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে গ্রামগুলো পরিণত হয় ভুতুড়ে জনপদে। আলোর ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় বাজারগুলোও প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। দিনে সূর্যের আলো থাকলেও রাতের অন্ধকার দূর করতে বিদ্যুতের আলো এই অঞ্চলের মানুষের কাছে ছিল স্বপ্নের মত। সেখানকার মানুষের দীর্ঘ দিনের সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে। বিদ্যুতের আলো পেয়ে চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।
রবিবার দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে ইউনিয়ন দু’টির বিদ্যুৎ সংযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডলের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি ছিলেন দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. এজাজ আহমেদ মামুন, কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার সোহরাব উদ্দিন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মহিউদ্দিন, কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি রেজওয়ান আলী খান। এদিন চরাঞ্চলে ২২১টি সংযোগের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের যাত্রা শুরু হয়।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, চরের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিতে চলেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় চরের মানুষের জীবনযাত্রায় আমুল পরিবর্তন আসবে। এসব এলাকায় ছোট ছোট কল কারখানা গড়ে উঠবে।
দৌলতপুর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) কে এম তুহিন মির্জা জানান, দুর্গম চর হওয়ায় সেখানে বিদ্যুতের লাইন স্থাপন ও মামলামাল পরিবরন খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। পদ্মা নদীর মাঝ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে লাইন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া চিলমারী এলাকায় একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪২ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর দুই ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার পরিবার বিদ্যুতের আওতায় আসবে।
দৌলতপুর আসনের সাংসদ অ্যাড. আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশা বলেন, প্রতিকুলতা সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মাত্র দুই বছরের মাথায় চরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের যাতাযাতের জন্য রাস্তা নির্মাণ ও পদ্মা নদীর ভাগজোত পয়েন্টে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল