২৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০৯:৪৫

চাঁদপুরে আমতলী ব্রিজ থেকে চান্দ্রা বাজারের সড়ক বেহাল

নেয়ামত হোসেন, চাঁদপুর

চাঁদপুরে আমতলী ব্রিজ থেকে চান্দ্রা বাজারের সড়ক বেহাল

চাঁদপুরে আমতলী ব্রিজ থেকে চান্দ্রা বাজার সড়ক।

চাঁদপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী ফরিদগঞ্জের সীমান্তলগ্ন বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের অবস্থান। বহু আগেই ডাকাতিয়া নদী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডকে আলাদা করে রেখেছে। ইউনিয়নের এই ৩টি ওয়ার্ডে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসবাস। উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন হিসেবে বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নটি শত বছরের ইতিহাস আছে। ফরিদগঞ্জে সবচাইতে বড় চান্দ্রাবাজারটি ওই ইউনিয়নে অবস্থিত। ডাকাতিয়ার কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা বাজারটির ব্যবসা-বাণিজ্যে জমজমাটভাব এখনো আছে।

অথচ আমতলী থেকে চান্দ্রাবাজার সড়কটি পরিকল্পিতভাবে সংস্কার না হওয়ায় প্রতিমাসে ব্যবসায়ীরা কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষের ব্যবসায়িক কার্যক্রম এই বাজারটিকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। প্রাচীনকাল থেকেই চান্দ্রাবাজারে বড় বড় নৌকা আর জাহাজে করে ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান ছিল। কিন্তু এই সড়কটির বেহাল দশায় এই ইউনিয়নের বাসিন্দারা ছুটে চলছেন ধানুয়া, বাঘড়া ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন বাজারে। এতে করে চান্দ্রাবাজারের ব্যবসায়ীরা মূলত বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাঁদপুর ইরিগেশন প্রজেক্টের (সিআইপি) বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় ডাকাতিয়া নদীতে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুই যুগ আগে ইউনিয়নটিকে একত্রিত করতে সেকদী-লোহাগড় ও সেকদী-আমতলী ব্রিজ দুটি নির্মাণ করা হয়। সেকদী-আমতলী ব্রিজটি হয়ে ডাকাতিয়া নদী আর চরের মাঝখান দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে বাজারের সাথে যুক্ত হয়েছে।

এই রাস্তাটি তৈরি হওয়ায় সেকদী, পালতালুক ও তরজিরান্তি গ্রামের শত শত মানুষের দৈনন্দিন চলাচলের পাশাপাশি বাজারটির সাথে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসায়িক যোগাযোগ সুদৃঢ় হয়। রাস্তাটির দু’পাশেই বছর জুড়ে পানি থাকে। আর এই পানিতেই চলে মাছের চাষ। রাস্তাটি নির্মাণ করার পর রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, পণ্য ও যানবাহন চালিত গাড়ি নিয়মিত চলাচল করতো। তবে চরটিতে থৈ থৈ পানি আর মাছ চাষের কারণে রাস্তাটি মেরামত করে ঠিক রাখা যাচ্ছে না।

কয়েক বছর আগে জাইকার অর্থায়নে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তাটির সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। বছরখানেক আগেও এলজিএসপি’র অর্থায়নে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তাটিতে ইটের সলিং করে দেওয়া হলেও এখনো পায়ে হেঁটে চলার উপযোগী করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে জেলার ঐতিহ্যবাহী চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, চান্দ্রা ছামাদিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, কিন্ডার গার্ডেন, ১ নম্বর বালিথুবা ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কয়েকটি ব্যাংক বীমাসহ গুরুত্বপূর্ণ অফিস চান্দ্রা বাজারকে ঘিরেই অবস্থিত। এতে করে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করতে আসা জনগণকেই এ সড়ক দিয়ে চলাচলে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

পরিবার-পরিকল্পনা পরিদর্শক জুবায়ের হোসেন বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি সেকদীতে অবস্থিত হওয়ায় সড়কের কারণে পূর্বাঞ্চলের মানুষগুলো চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভাঙা সড়কের কারণে নারীরা পরিবার-পরিকল্পনা সেবা, গর্ভবতী মায়েদের প্রসবপূর্ব চেকআপ ও ডেলিভারি সেবাসহ অন্যান্য সেবা নিতে যাচ্ছে না।

চান্দ্রা বাজারের ব্যবসায়ী বারাকাত উল্যাহ ও মেম্বর মো. আলী বলেন, সড়কটির কারণে চান্দ্রাবাজার ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

১ নম্বর বালিথুবা পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটওয়ারী জানান,  রাস্তাটি ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ার পর ২০১৫ সালে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির কাজ করা হয়। পরে অনিয়মের কারণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কাজটি বন্ধ করে দেয়, যার বিরুদ্ধে দুদুকে মামলা চলছে। আমি অনেক চেষ্টা চালিয়েছি কিন্তু দুদুকে মামলা থাকায় এলজিইডি’কে দিয়ে রাস্তাটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা যাচ্ছে না। মূলত রাস্তার দুই পাশে মাছ চাষের কারণে তা ভেঙে বিলীন হচ্ছে। তাই সেকদি, টুবগী সড়কটি স্থায়ীভাবে গাইড ওয়াল দিয়ে দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর