কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে অতিষ্ঠ তিস্তা পাড়ের মানুষ। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনাদের সাংবাদিকদের এখানে আসার দরকার নাই। আমাদের মহব্বত করার দরকার নাই। আপনারা চলে যান, মন্ত্রী, এমপি থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আমরা পাও ধরেছি, তারা কোনো সাড়া দেয় নাই। এখন আপনারা আসছেন দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরতে।’ এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উলিপুর উপজেলার বজরা ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কাসিমবাজার লকিয়ারপাড় এলাকার ভাঙন কবলিতরা।
নদীভাঙন কবলিত এলাকার স্থানীয় আব্বাস মিয়া (৪৫), হারু মিস্ত্রি (৫২) ও দুলাল দোকানদার জানান, গত তিন বছর থেকে তার এসব এলাকায় নদী ভাঙছে। এখন পর্যন্ত প্রায় সহস্রাধিক মানুষ এই নদীর ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে। এছাড়াও গত ৪/৫ দিনে প্রায় ৬০টি বাড়ি ভেঙে গেছে। এখনো লোকজন নদীর পাড় থেকে গাছপালা, বাড়িঘর অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন।
এখানকার মানুষের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত কেউই এখানে দুর্দশার চিত্র দেখতে আসেননি। বরং বারবার যোগাযোগ করেও কোনো ফল নেই। ফলে তিস্তা পাড়ের গৃহহীন মানুষগুলো ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১৫/১৬টি ভাঙন কবলিত পরিবার খোলা আকাশের নিচে সামান্য ছাপড়া ঘর তুলে কোনোরকম অবস্থান করছেন। কাসিমবাজার নাজিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আলতাফ হোসেন অবসরের প্রায় ১৫/১৬ লাখ টাকা দিয়ে মনোরম বিল্ডিং বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন, শেষ বয়সে একটু ভালভাবে থাকার জন্য। সেই বিল্ডিং এখন তিস্তার নদীগর্ভে চলে গেছে। ভিটেহারা হয়ে এখন তিনি উলিপুরের তবকপুর ইউনিয়নে জামাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ওই বাজারের একমাত্র মুছি পরিবার হরিদাস বসতবাড়ি হারিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। একই অবস্থা আব্দুল আউয়াল মাস্টারের বড় ভাই আব্দুর রাজ্জাক ও ছোট ভাই রফিকের। তারা এখন নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশে অবস্থান করছেন। তাদের বসতবাড়ি, গাছপালা, আবাদি জমি সব এখন তিস্তা নদীতে মিশে গেছে।
কাসিমবাজার এলাকার গণমাধ্যমকর্মী ফরহাদ হোসেন জানান, গতরাতে বাড়ি ভেঙে রঞ্জুকারি, সাজু বেকারি এখনো জায়গা পাননি। একই অবস্থা ৩৫/৪০টি পরিবারের। তারা বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গবাদিপশু ও জিনিসপত্র রেখে এসে এখন আশ্রয়ের জায়গা খুঁজছেন। কেউ কেউ করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া হাইস্কুল ও মাদ্রাসার ঘরে আশ্রয়ের জন্য দেন-দরবার করছেন। ভিটেমাটি, গাছপালা, জায়গা-জমি হারিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে গেছেন।
মেগা প্রকল্পের নামে এখানে স্বল্পমেয়াদে কাজ করায় তিস্তার তীব্র ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর শত শত পরিবার নতুনভাবে গৃহহীন হচ্ছে। প্রশাসনের লোকজন আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এই মুহূর্তে তিস্তা নদী ভাঙনে হুমকি মুখে রয়েছে কাসিমবাজার হাট, নাজিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাসিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাসিমবাজার আলিয়া কামিল মাদ্রাসাসহ সহস্রাধিক বাড়িঘর।
বিষয়টি নিয়ে বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল আমিন জানান, আমার ইউনিয়ন এবং গাইবান্ধার হরিপুর ইউনিয়নের সীমানায় তিস্তা নদী প্রবলভাবে ভাঙছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না গেলে এলাকাবাসী ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে পানি প্রবাহের ফলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন কিছুটা নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই