হামজা চৌধুরীর আগমনে বাংলাদেশ ফুটবল পায় নতুন এক গতি। নতুন করে দেশের ফুটবল নিয়ে মেতে ওঠে ফুটবলপ্রেমীরা। ফুটবলারদের মধ্যেও আসে নতুন প্রাণের সঞ্চার। এশিয়ান কাপের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী ভারতের সঙ্গে ড্র করে লাল-সবুজের দল। পরে ঢাকায় প্রীতি ম্যাচে ভুটানকে হারায় হামজা-জামালরা। সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলতে নামে তারা। দীর্ঘদিন পর কানায় কানায় ভরে যায় গ্যালারির প্রতিটি সিট। এ যেন ফুটবলের নতুন জোয়ারের আশা। কিন্তু ভুল ট্যাকটিসের কারণে ২-১ গোলে হারে বাংলাদেশ। হামজা, সমিত, ফাহামিদুলের মতো প্রবাসী ফুটবলার থাকার পরও ঘরের মাঠে হারে আশাহত হন দর্শকরা।
এ পরাজয়ের পর স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর দলের কোচকে নিয়ে চলছে কাটাছেঁড়া। বিশেষ করে দল নির্বাচনে ত্রুটি ও খেলার কৌশলে অপরিপক্বতাসহ হামজাদের ঠিকমতো তাদের পজিশনে ব্যবহার করতে না পারাটা অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে। শুধু তাই নয়, হামজা-সমিতদের কোচ হিসেবে কাবরেরা কতটুকু যোগ্য- এ নিয়েও সমালোচনা চলছে। খেলোয়াড়দের একটি অংশও তার ওপর নানানভাবে বিরক্ত। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া দেখলেই পরিষ্কার প্রায় সব ফুটবলমোদিরা কাবরেরার পদত্যাগ চাইছেন। তার জায়গায় হামজাদের মানের খেলোয়াড়দের জন্য অন্য কোনো উচ্চমানের কোচ নিয়োগ চান তারা। যেন জাতীয় দল আরও শক্তিশালী হয়।
এখন প্রশ্ন, দেশের ফুটবলের ইতিহাসে দীর্ঘ সময় কাজ করা কোচ কি পারবেন হামজা, সমিত ও ফাহামিদুলদের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে। নাকি নতুন কোচের খোঁজে নেমে পড়বে বাফুফে। কেননা হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ হতে এখনো বাকি তিন মাস। গতকাল সংবাদ সম্মেলন শেষে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন বাফুফের কয়েকজন সদস্য। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার ৮ মাস পর ‘মিট দ্য প্রেস’ নামে প্রথম কোনো সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। গতকাল শনিবার রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে দেশের ফুটবলের এ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও আগামী ৬ মাসের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন কমিটির সদস্যরা। এ সময় নির্বাহী কমিটির ২১ সদস্যের ১৪ জন উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্য রাখেন বাফুফে সভাপতিসহ বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যানরা। সবার শেষে বাফুফের নির্বাহী সদস্য শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহীন তার নির্ধারিত অভ্যন্তরীণ অডিট ও গভর্মেন্ট রিলেশন নিয়ে আলোকপাত না করে জাতীয় দল কমিটির সদস্য হিসেবে হাভিয়ের কাবরেরার পদত্যাগ চান। সেখানে সবার সামনে কাবরেরার পদত্যাগ চেয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় দল কমিটির সদস্য হিসেবে কাবরেরার পদত্যাগ চাচ্ছি। কোচকে সড়ানোর এজেন্ডা নিয়েই আমি কথা বলতে এসেছি। তাকে সরিয়ে ১৮ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’
তবে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যেটা হয়েছে আনফরচুনেট। এটা নিয়ে আমরা ইন্টারনালি আলোচনা করব।’ তিনি বলেন, ‘এটা আসলে এখনো প্রি-ম্যাচিউর প্রশ্ন এবং উত্তর দিলেও প্রি-ম্যাচিউর হবে। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড একটা প্রক্রিয়া রয়েছে। যেখানে জাতীয় দল কমিটি অ্যাসেসমেন্ট ও রিভিউ হবে। সেখানে অ্যাসেসমেন্ট হওয়ার পর আপনাদের প্রশ্ন নেওয়া যাবে এবং উত্তরও দেওয়া যাবে।’ এদিকে হাভিয়েরে কাবরেরার সঙ্গে বাফুফের চুক্তি আছে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত। এর আগে চাইলে বাফুফে কোচকে অপসারণ করতে পারে। তবে চুক্তি শেষের আগে কোচকে অপসারণ করা হলে জরিমানা গুনতে হবে বাফুফেকে।