বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে জোর করে বাংলাদেশে পুশইন এখনো অব্যাহত রেখেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার মিড়গড় এবং পেদিয়াগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে চার ভারতীয়সহ ১৬ জন, লালমনিরহাটের তিনটি সীমান্ত দিয়ে তিনজন, দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্ত দিয়ে ৯ শিশুসহ ১৫ জন, মৌলভীবাজার বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কড়ইগড়া সীমান্ত দিয়ে দুই শিশুসহ নয়জনকে পুশইন করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
পঞ্চগড় : পঞ্চগড় সদর উপজেলার মিড়গড় এবং তেঁতুলিয়া উপজেলার পেদিয়াগজ সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে পুশইন করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ভারত। এদের মধ্যে চারজন ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। বাংলাদেশিদের মধ্যে ছয় নারী, দুই শিশু ও চারজন পুরুষ রয়েছেন। আটক বাংলাদেশিদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বিজিবি। ভারতীয়দের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি আটকরা হলেন খুলনা জেলার দীঘলিয়া উপজেলার কলাপাতগাড়ি গ্রামের মৃত মুরাদ শেখের স্ত্রী আয়শা শেখ (৩৭), তার ছেলে নিশা শেখ (২২) এবং মিরাজুল শেখ (২৩), নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার সুক্তক গ্রামের বাবু শেখের স্ত্রী নিলুফা শেখ (৩৭), তার মেয়ে মরিয়ম শেখ (৮), ছেলে রেহান শেখ (২১) এবং বাগের হাট জেলার মোল্লার হাট উপজেলার গাংনি গ্রামের আক্তার মোল্লার ছেলে আবু তালেব (২১)। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশি নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ও ভারতীয় নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
এদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলার পেদিয়াগজ সীমান্ত দিয়ে পাঁচজনকে একই সময়ে পুশইন করে বিএসএফ। পরে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তেঁতুলিয়া থানা আটকদের তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোয় নিরাপত্তা হেফাজতে রেখেছে। এদের মধ্যে তিনজন পুরুষ, দুজন নারী রয়েছেন। আটকরা হলেন যশোর জেলার শারসা উপজেলার মারফত আলীর ছেলো কোরবান আলী গাজী (৩৩), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (২৭) তার বোন ফারজানা (২৩), অভয় নগর উপজেলার হিদিয়া শ্যামলনগর গ্রামের মৃত মকবুল শেখের ছেলে তরিকুল শেখ (৪২) নড়াইল জেলার গোবরা বাজার বীরগ্রাম এলাকার মৃত ঈশ্বর গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের মেয়ে বন্দনা রানী বিশ্বাস (৩৭)। তেঁতুলিয়া উপজেলায় আটক পাঁচজনের বাড়ি যশোর জেলায়। তাদের মধ্যে এক নারী গর্ভবতী থাকায় তাকে তেঁতুলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের তিনটি সীমান্ত দিয়ে পুশইনের শিকার ৩ জনকে আটক করেছে বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি ও এলাকাবাসীর প্রতিরোধে পুশইনের অপেক্ষায় শূন্যরেখায় রয়েছে নয়জন।
গতকাল সকালে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম দুই উপজেলার তিনটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে তাদের পুশইন ও পুশইনের চেষ্টা করে বিএসএফ। পুশইনের শিকাররা হলেন- সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সাতখুটা এলাকার মকবুল গাজীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩৫), একই এলাকার পুটুনী গ্রামের মৃত কামেম মোল্লার ছেলে আমজাদ মোল্লা (৪০) ও নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পাটেশ্বরী এলাকার আবদুল মুকিত মোল্লার ছেলে মামুন মোল্লা (৫০)।
দিনাজপুর : বিরামপুর সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে ১৫ জনকে পুশইন করা হয়। অচিন্তপুর সীমান্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ কমান্ডার রফিকুল ইসলাম জানান, ২৮৫ নম্বর মেইন পিলার এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিদ্যুতের আলো বন্ধ করে দেয়। বিজিবি সদস্যরা সেখানে ওঁতপেতে অবস্থান করে। পরে অন্ধকারে ভারত থেকে ১৫ জন ব্যক্তিকে আসতে দেখে তাদের আটক করে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়।
মৌলভীবাজার : বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল সীমান্ত দিয়ে গতকাল ভোরে ১৩ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হাসান জানান, তথ্য যাচাইবাছাই করে তাদের থানায় হস্তান্তর করা হবে।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার মুন্সিপাড়া বিওপি কড়ইগড়া সীমান্ত দিয়ে নয়জনকে পুশইন করা হয় বৃহস্পতিবার রাতে। বিজিবি সূত্রে জানা যায়, তাদের মধ্যে আটজনের বাড়ি বাগেরহাট এবং একজনের ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায়।