পেশায় তিনি ভ্যানচালক। কিন্তু নেশা হলো গান গাওয়া। মরমি গায়ক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভঙ্গিতে গলা ছাড়তেন। কণ্ঠ শুনে লোকজন মুগ্ধ হয়ে বলতেন, রেজাউল করিম (৫২) এ কালের মানবেন্দ্র। এখন আর গান শুনিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করবেন না রেজাউল। থেমে গেছে তার কণ্ঠ। শনিবার বিকালে নাটোরের লালপুর উপজেলার কৃষ্ণরামপুর গ্রামের এক আমবাগানে ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া গেছে রেজাউলের। তার বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামে। তিন সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। তাকে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তার ছোট ভাই লিলন উদ্দিন।
রেজাউল করিম নজরুল ও রবীন্দ্রসংগীতও গাইতেন। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্রে নজরুল সংগীতের শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। টেলিভিশনেও গান গেয়েছেন। তিনি ভাল হারমোনিয়ামও বাজাতেন। বাদ্যযন্ত্র দলের সঙ্গে কৃষ্ণরামপুরে বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন হারমোনিয়াম বাজাতে। যে বাড়িতে বিয়ে, সেই বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরের একটি আমবাগানে তার মরদেহ ঝুলতে দেখেন স্থানীয় এক ব্যক্তি।
কনের চাচাতো ভাই মিঠুন কুমার সরকার জানান, শনিবার সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাদ্যযন্ত্রের দল বাদ্য বাজিয়েছে। তারপর থেকে রেজাউল করিমকে দেখা যাচ্ছিল না। বিকালে কনে বিদায়ের সময়ও বাজনা বাজানোর জন্য তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এরই মধ্যে এক ব্যক্তি বাড়ির পিছনে গিয়ে আমগাছে পাটের কাঁচা আশ দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় রেজাউল করিমকে ঝুলতে দেখেন। এরপর পুলিশে খরব দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর পুলিশ ফাঁড়ির একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। রাত ৮টার দিকে যান লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান। তখন মরদেহ নামিয়ে সুরতহাল করা হয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান রেজাউল করিমের ভাই লিলন উদ্দিন। তিনি বলেন, তার ভাই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন না। তাকে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান বলেন, মরদেহ দেখে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। তবে সেটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে। এখন তারা ঘটনাটি তদন্ত করছেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা