নওগাঁর সাপাহারে আম চাষিরা এ বছর আম চাষে যেমন বিপ্লব ঘটিয়েছেন, ঠিক তেমনই করলা চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হচ্ছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন করলা চাষিরা। করলা বিক্রি করে অনেকেই এখন সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন।
বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই এই উপজেলার চাষিরা করলা চাষে উৎসাহিত হয়ে তাদের হাইব্রিড আম বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে সাথি ফসল হিসেবে করলা চাষ করে। পরে স্থানীয় বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটিয়ে কিছু টাকা লাভ করতেন। পরবর্তী সময়ে করলা চাষের খবর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে কাঁচা তরিতরকারির ব্যবসায়ীরা ছুটে চলে আসেন সাপাহারে।
এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার করলা চাষিদের সেন্টার হিসেবে সাপাহার-তিলনা পাকা সড়কের বাহাপুর মোড়ে গড়ে ওঠে মৌসুমি প্রতিদিনের জন্য ৩-৪ ঘণ্টার এক অস্থায়ী বাজার। ভোর হলেই বিভিন্ন এলাকার করলা চাষিরা তাদের উৎপাদিত করলা নিয়ে চলে আসেন এই বাজারে এবং ক্রেতারা তাদের কাছে বিভিন্ন দামে ক্রয় করে মিনি ট্রাকযোগে সকাল ১০টার মধ্যেই রওনা হয়ে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে।
প্রতি মণ করলা ৯০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হয়তো বাজার কিছুটা বৃদ্ধি পাবে বলেও অনেক চাষি মনে করছেন। আমের পরে সবজি চাষেও এবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ চিনবে সাপাহারকে এমনটাই মনে করছেন উপজেলার অভিজ্ঞ কৃষকরা।
করলার অস্থায়ী এই বাজারে এসে ঢাকার কাওরান বাজারের আনোয়ার হোসেন নামের এক সবজি ব্যবসায়ী জানান, সাপাহারের করলার গুণগতমান ভাল ও এখান থেকে করলা কিনে লাভ ভাল হওয়ায় তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে এখানকার করলা রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছেন।
স্থানীয় করলা চাষি নজরুল ইসলাম, ছয়ফুল ইসলাম ও আব্দুল মমিনসহ বেশ কিছু কৃষক জানান, অস্থায়ীভাবে উপজেলা সদরের বাইরে এই স্থানে করলার বাজার গড়ে না উঠলে এখানকার চাষিরা এই হারে করলা চাষাবাদ করতেন না। বর্তমানে তারাসহ অনেকেই এখন করলা চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন।
এই বাজারের ক্রেতা বিক্রেতারা জানান, প্রতিদিন এই বাজার থেকে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ টন করলা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মজিবুর রহমান জানান, কয়েক বছর ধরে করলা চাষ এ উপজেলার চাষিদের মাঝে এক নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে উপজেলার অনেকেই এখন দেশি, হাইব্রিড, সোনামুখীসহ বিভিন্ন জাতের করলা চাষাবাদ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। এ বছর উপজেলায় ১৫০ থেকে ২০০ বিঘা জমিতে করলা চাষাবাদ হয়েছে।
করলা ক্ষণস্থায়ী ফসল হলেও এবারে ব্যাপক ফলন হয়েছে, দামও রয়েছে কৃষকের মনের মতো। আবহাওয়া আর কিছু দিন চাষিদের অনুকূলে থাকলে করলা চাষের মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে। উপজেলার আম চাষিরা এ বছর আম চাষে যেমন এক বিপ্লব ঘটিয়েছেন, ঠিক তেমনটাই করলা চাষেও বিপ্লব ঘটাবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই