২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১০:২৮

কাদের মির্জার বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের অভিযোগ

নোয়াখালী প্রতিনিধি

কাদের মির্জার বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের অভিযোগ

উচ্ছেদকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আব্দুল কাদের মির্জা

বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে কাদের মির্জা আধুনিক শিশু পার্ক গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। 
 
শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে উচ্চ আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বসুরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৮নং করালিয়া মৌজার ১৭৯ নং খতিয়ানের ১ দশমিক ৫৭ একর ভূমির হুমায়ন টিম্বার মার্সেন্ট এন্ড সমিলে এ উচ্ছেদ চালায় কাদের মির্জা।
 
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ফিরোজ আলম মিলন জানান, আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলার ৮নং করালিয়া জেলা জরিপের ১৭৯নং ও এম আর আর ১৩৩/২ নং খতিয়ানের ৫৫৮ দাগ ১ আনা ৮৭ ডিং আন্দরে দাগের দক্ষিণ পশ্চিমাংশে ১৭ডিং ভূমিতে গত ২৫ মার্চ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা জজ আদালত। আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়, আপত্তি দাখিল ও শুনানি পর্যন্ত বিবাদী পক্ষ যাহাতে তফসিল ভূমিতে প্রবেশ করতে না পারে কিংবা কোন প্রকার বন্দোবস্ত প্রদান করতে কিংবা বাদী পক্ষের দখলে কোন প্রকার বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে সেই মর্মে বিবাদী পক্ষের অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ ধারা রহিত করা গেল। তখন এর অনুলিপি দেওয়া হয় নোয়াখালী জেলা প্রশাসক, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাকে। 
 
মিলন অভিযোগ করেন, ১৯৯০ সালে আমরা চার ভাই ১৭৯নং দাগে মোট ১৭ডিং জায়গা বদরুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১১জনের নিকট থেকে ক্রয় করি। এরপর ওই জায়গার উত্তর অংশে সাহাব উদ্দিন ও দক্ষিণ অংশে রহমত উল্যাহ ৪ডিং জায়গা ক্রয় করে। বাকী জায়গা দিয়ে ১৯৯৯ সালে বসুরহাট ইসলামী ব্যাংকে মর্টগেজ দিয়ে আমরা ৩ কোটি টাকা লোন গ্রহণ করি। ১৭৯ দাগের যে বাকি ১০ডিং জায়গা রয়েছে তাতে কোন উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি। শুধু মাত্র আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ১৭ডিং জায়গায় অবৈধ উচ্ছেদ চালায় কাদের মির্জা। তবে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের সাথে সরকারি কোন বিভাগের কোন কর্মকর্তা জড়িত নেই। শুধু মাত্র কাদের মির্জা একক ক্ষমতাবলে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শতাধিক অনুসারী নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পেশি শক্তি দিয়ে আমাদের জায়গা জবর দখল করে নেয়। একই সাথে সমিল মেশিন, ফার্নিচার মেশিন, সেগুন কাঠ, টিন বড় ঘর দুটি ভেঙ্গে নিয়ে যায়সহ আনুমানিক ৫ কোটি টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এরপর সেখানে কাদের মির্জা আধুনিক শিশু পার্ক গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। 
 
এ বিষয়ে জানতে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই এ অভিযোগের বিষয়ে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
 
তবে গত ২ সেপ্টেম্বর ফিরোজ আলমের বড় ভাই ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরকে বসুরহাট পৌরসভার প্যাডে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনি সরকারি খাস সম্পত্তির ওপর বিধিবহির্ভূতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। জনস্বার্থে উক্ত জায়গার ওপর বসুরহাট পৌরসভার শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে আপনার বিধিবহির্ভূত স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য পুনর্নির্দেশ দেওয়া হলো। এর আগে গত ২২ মার্চ একই বিষয়ে আরেকটি নোটিশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং স্থাপনা সরিয়ে না নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
 
এ ঘটনা নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম খান, নোয়াখালীর এসপি মো.শহীদুল ইসলাম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক মীর ও কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.সাইফুদ্দিন আনোয়ারকে মৌখিক ভাবে অভিযোগ করে ও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও জায়গার বর্তমান মালিক।  
 
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, এ বিষয়ে মৌখিক ভাবে অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। মেয়র জানিয়ে এটা বসুরহাট পৌরসভার জায়গা আর প্রতিপক্ষ জানিয়েছে এটা তাদের জায়গা। প্রতিপক্ষ একটা স্টে অর্ডার দেখিয়েছে। এটা মেয়রকে জানিয়েছি।  
 
এ বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক মীরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি সরাসরি তার অফিসে কথা বলার আহ্বান জানান।
 
এ বিষয়ে জানতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো.শহীদুল ইসলামের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
 
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান জানান, উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে এক ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছে। আমি তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলতে বলেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আপনাকে একটা প্রতিকার দিবে। সরকারি জায়গা হলে এটা আমরা দেখবো, বেসরকারি জায়গা হলে উনি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ করবে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে বলেছি কাগজপত্র জমা দেন। কাগজপত্র জমা দিলে যাচাই বাছাই করে বুঝা যাবে প্রকৃত মালিকানা কার।
 
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর