শরীয়তপুর সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের দলের বিরুদ্ধে অবস্থান, পুলিশ প্রশাসনের বিরূপ আচরণ ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামী লীগের পরাজিত পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থী।
আজ শনিবার দুপুর ১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পরাজিত আওয়ামী লীগের (নৌকা) প্রার্থী আংগারিয়া ইউনিয়নে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আসমা আক্তার, ডোমসার ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজান মোহাম্মদ খান, পালং ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল হোসেন দেওয়ান, শৌলপাড়া ইউনিয়নে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন খান ও মাহমুদপুর ইউনিয়নে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন হান্নান তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আসমা, মিজান, আবুল হোসেন, আলমগীর, লিয়াকত অভিযোগ করে বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে আমরা দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়েছি। ১১ নভেম্বর ইউপিগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ডোমসার ইউনিয়নে বাড়ি শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জন ও সাবেক মেয়র, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, তার ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম কোতোয়াল নৌকার বিপক্ষে, বিদ্রোহী প্রার্থী মাষ্টার মজিবুর রহমান খানের (আনারস) পক্ষে কাজ করেন। এছাড়া আংগারিয়া ইউনিয়নে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রব মুন্সী ও তার ছেলে পাবেল মুন্সীসহ লোকজন আওয়ামী লীগ নৌকা প্রার্থী আসমা আক্তারের বিপক্ষে, বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের পক্ষে কাজ করেন। শৌলপাড়া ইউনিয়নে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আব্দুল আলিম আওয়ামী লীগ নৌকা প্রার্থী আলমগীর হোসেন খানের বিপক্ষে, বিদ্রোহী প্রার্থী এসকান্দারের (ঘোড়া) পক্ষে কাজ করেছে। যা দুঃখজনক।
তারা বলেন, নির্বাচনে পুলিশ প্রশাসন নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান করে। বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় ও নৌকার ব্যাচ পড়া দেখলেই ধাওয়া দেয়। পুলিশ প্রশাসন নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে। বিদ্রোহী প্রার্থী ও পুলিশের লোকেরা আমাদের লোক আটকে রেখে ভোট কারচুপি করেছে। এছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন বোমা মেরে নৌকার ক্লাব ভাঙচুর, আমাদের সমর্থকদের মারধর, ঘর ভাঙচুর করে লুটপাট করে। এতে আমাদের লোক আহত হয়। বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে। আমরা মামলা করতে গেলে মামলা নিচ্ছে না পুলিশ।
সুতরাং এই নির্বাচন আমরা মানি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সহযোগিতা চাই। পুনরায় নির্বাচন চাই আমরা।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল বলেন, আমি নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছি। সভা সমাবেশ করে জনগনকে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহবান করেছি। তারপর আমার বিরুদ্ধে কেউ যদি বলে আমি বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি, তা মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার বিরুদ্ধে কেউ বলে থাকলে তা প্রমাণ দিতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রব মুন্সী বলেন, নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে আংগারিয়া ও তুলাসার ইউনিয়নসহ কয়েকটি ইউনিয়নে সভাসমাবেশ করেছি। এরপরেও যদি আমার বিপক্ষে কেউ অভিযোগ করে থাকে, তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তবে কিছু নেতাকর্মী অযোগ্য লোকদেরকে চেয়ারম্যান বানানোর জন্য মাঠে নেমেছিল। জনগণ তােদের ভোট দেয়নি।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জন বলেন, আমি নৌকার লোক। নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছি।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আব্দুল আলিম বলেন, আমার বাড়ি জাজিরাতে। আমি নৌকার লোক। শৌলপাড়ার
এসকান্দার আমার আত্মীয় হয়। নৌকার পক্ষে ছিলাম, থাকবো। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে আলমগীর হোসেন খান।
এব্যাপারে শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আক্তার হোসেন বলেন, তারা যেই অভিযোগ আনছেন এটার কোন সত্যতা নেই৷ আমরা তাদের মামলা নিয়েছি। তারা কোন অভিযোগ করতে আসলে অবশ্যই নেব।
বিডি প্রতিদিন/এএ