সাগরকন্যা খ্যাত পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ফিরেছে চিরচেনা রূপে। টানা তিন দিনের সরকারি ছুটিতে পর্যটকের যেন ঢল নেমেছে সৈকতে। লেম্বুরবন থেকে গঙ্গামতি পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকত এখন টইটুম্বুর। শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, রাখাইন মার্কেট, ইলিশ পার্ক ও মৎস্য বন্দর মহিপুর-আলীপুরসহ সব পর্যটন স্পটে পর্যটকদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
আগত পর্যটকরা সৈকতের বালিতে গা ভাসিয়ে আনন্দে মেতেছেন। বুকিং হয়ে গেছে কুয়াকাটার দুই শতাধিক হোটেলে মোটেলের প্রায় সব রুম। পর্যটকদের আগমনে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রি বেড়েছে। তবে আগত পর্যটকরা স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার সচেতনতামূলক মাইকিং করতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের পর শনাক্তের হার কমে এসেছে। তাই ঘরবন্দী মানুষ একটু শান্তির খোঁজে বের হয়েছে মানের টানে ঘর থেকে। এ কারণে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা বাড়ছে পর্যটকের ভিড়। তবে সরকারি বিধিনিষেধ চলামান থাকলেও কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। তিন দিনের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটকে একাকার কুয়াকাটার সৈকত। পর্যটকের পদভারে এখন মুখরিত দর্শনীয় স্থানগুলো। অনেকেই প্রিয়জনদের সঙ্গে সেলফি তুলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকে আবার সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের কারণে অনেকেই ভুলে গেছে করোনার কথা। সাগরে ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করছেন আগত পর্যটকদের পরিবারের সব সদস্য মিলে। এদিকে, সতর্ক থাকতে বারবার পরামর্শ দিচ্ছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য, কুয়াকাটা ইকোপার্ক, রাখাইন মার্কেট, ছায়াঘেরা নারিকেল কুঞ্জ, লেম্বুর চরের শুঁটকি পল্লী, মিশ্রীপাড়ায় অবস্থিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তি, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার সবুজ বন, মম্বীপাড়ার সৎ সঙ্গের মন্দির, ঝাউবাগান, লেম্বুর চর বনাঞ্চল, গঙ্গামতির লেকপাড় সর্বত্র পর্যটকের ভিড় রয়েছে।
পর্যটক রিমা আক্তার জানান, করোনার কারণে অনেক দিন ধরে কোথাও যাওয়া হচ্ছিল না। সংক্রমণ কমে যাওয়ায় স্বপরিবারে কুয়াকাটায় এলাম। দীর্ঘদিন পর এমন দৃশ্য দেখে বেশ ভালোই লাগছে।
আরেক পর্যটক আফ্রোজা আক্তার মিলি জানান, সত্যিই অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা কুয়াকাটা। যেন সবকিছুই ছবির মতো সাজানো গোছানো। পরিবারের সবাইকে নিয়ে কুয়াকাটায় এলাম। সৈকতে দাঁড়িয়ে সূযোদয় ও সূর্যাস্ত দেখলাম। যা আমাদের মুগ্ধ করেছে।
হোটেল গোল্ডেন ইন কুয়াকাটার জহিরুল ইসলাম স্বত্ত্বাধিকারী বলেন, তাদের হোটেলে মোট ১৪টি রুম রয়েছে। তিন দিনের ছুটিকে সামনে রেখে সব রুমই বুকিং হয়ে গেছে। এখনও অনেক ফোন আসছে বুকিংয়ের জন্য। তারা বুকিং নিতে পারছি না বলে তিনি জানিয়েছেন।
হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরিফ বলেন, কুয়াকাটায় এখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক অবস্থান করছে। তবে বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের লেবুখালী পয়েন্টে 'পায়রা সেতু' চালু হওয়ায় পর্যটক বেড়ে গেছে।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার আবুল খায়ের বলেন, প্রতিদিনই থানা পুলিশের একটি টিম পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের কয়েকটি টিম দর্শনীয় স্পটগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক তাদের নজরদারিতে রয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, প্রতিনিয়তই কুয়াকাটা পর্যটক বাড়ছে। সমুদ্র সৈকত থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশ স্টেশন পর্যন্ত যানবহন ও পর্যটকের ভিড়ে রাস্তায় চলাফেরার কোন পরিবেশ নেই। তাই জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ট্রাফিক পুলিশ স্থাপনের জোর দাবি জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত