গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক সালুয়াটেকি এলাকার বহুল আলোচিত ইদ্রিস হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর। গ্রেফতারকৃত আসামি আব্দুর রব ভূইয়া ওরফে রবিন ভূইয়া (৫৫)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের মৃত হাজী আব্দুল মোতালিব ভূইয়ার ছেলে।
পিবিআই গাজীপুর সূত্রে জানা গেছে, মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি আব্দুর রব ভূইয়া ওরফে রবিন ভূইয়া আদালতে আত্মসমণ করলে আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ রিমান্ড শেষে আসামি রবিন ভূইয়াকে গোট ১০ মে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামিদের নাম উল্লেখ করে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পরিকল্পনা এবং অন্যান্য আসামিদের কার কি ভূমিকা ছিল বিস্তারিত বর্ণনা করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ২৫ আগষ্ট সকাল ৮টার দিকে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সালয়াটেকি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে ইদ্রিসের (৩০) মরদেহ উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের (এজাহার নামীয় ১নং আসামি) নানার বাড়ির দক্ষিণ পাশে পুকুর পাড়ে পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে নিহতের মা মোর্শেদা বাদী হয়ে ২৫ আগষ্ট ১০ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে কাপাসিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করেন। মামলাটি কাপাসিয়া থানা পুলিশ প্রায় ৪ মাস তদন্ত করে এবং তদন্তাধীন অবস্থায় ঢাকার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে পিবিআই গাজীপুর জেলায় পরবর্তী তদন্তের জন্য প্রেরণ করে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান মামলাটি তদন্ত করেন।
পিবিআই গাজীপুর আরও জানায়, আসামি রবিন ভূইয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানায়- এজাহারনামীয় ১নং আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের সাথে তার নানার বাড়ির সম্পত্তির ওয়ারিশ নিয়ে তার সাথে বিরোধ দেখা দেয়। ভিকটিম ইদ্রিস ও তার মামা রফিক তার বড় বোনের ছেলে মামলার এজাহারে উল্লেখিত ১নং আসামি জাহিদের পক্ষ নিয়ে তাকে তার মায়ের প্রাপ্য সম্পত্তি দখলে সহযোগীতা করে। পরবর্তীতে আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের সাথে ইদ্রিসের মনোমালিন্য হলে ইদ্রিস আলী আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের মামা রবিন ভূইয়ার সাথে যোগ দেয়।
পরবর্তীতে ঘটনার ৩ দিন আগে টোক বাইপাস মোড়ে এজাহারে উল্লেখিত আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে টোক বাইপাসে ভিকটিম ইদ্রিসকে ভয় দেখায়। এই সুযোগে এজাহারে উল্লেখিত আসামী সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের মামা রবিন ভূইয়া তার সহযোগী আসামিদের নিয়ে নিজের কাঠের মিলে বসে ইদ্রিসকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ভিকটিম ইদ্রিসের বন্ধু আসামি মেজবাহ উদ্দিনকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে ঘটনাস্থলে ডেকে আনার জন্য পরিকল্পনা করে। উক্ত পরিকল্পনা মোতাবেক পূর্বে গ্রেফতারকৃত এজাহার বর্হিভূত আসামি মেজবাহ উদ্দিন ঘটনার দিন রাত ২টার সময় সু-কৌশলে ভিকটিম ইদ্রিস আলীকে এই মামলার ঘটনাস্থল রবিন ভূইয়ার বাড়িতে নিয়ে আসে। পূর্ব থেকে ওই স্থানে অবস্থানরত ঘটনায় জড়িত আসামিরা রবিন ভূইয়ার কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা চুক্তির বিনিময় গলা চেপে ধরে ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে ও এলোপাথারীভাবে মারপিট করে ইদ্রিসকে হত্যা করে। এরপর এজাহারে উল্লেখিত আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের নানা বাড়ির যে ঘরে সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ ঘুমাতো ঐ ঘরের পিছনে পুকুরপাড়ে ঘটনাস্থলে ইদ্রিসের মরদেহ ফেলে রেখে চলে যায়।
এ ব্যাপারে পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, এজাহারে উল্লেখিত জহির আহসান জাহিদ তার মায়ের ওয়ারিশ প্রাপ্ত সম্পত্তি নেওয়ার জন্য তার মামা রবিন ভূইয়াকে বললে তার মামা রাজি না হওয়ায় সে স্থানীয় রফিক এবং রফিকের ভাগিনা ভিকটিম ইদ্রিস আলীর সহযোগীতা নেয়। এই সুযোগে ভিকটিম ইদ্রিস আলী জাহিদের দখলকৃত সম্পত্তি বিক্রয়ের কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে এজাহারনামীয় আসামি জাহিদের কথা বলে তার অগোচরে টাকা নেয়। এই বিষয়টি জাহিদ বুঝতে পারায় ভিকটিম ইদ্রিস ও তার মামা রফিকের সাথে তার বিরোধ হয়। ভিকটিম ইদ্রিস ও তার মামা রফিক পুনরায় এজাহার নামীয় আসামি জাহিদের মামা রবিন ভূইয়ার পক্ষ অবলম্বন করে।
তিনি আরও জানান, পরবর্তীতে রবিন ভূইয়া তার পৈত্রিক সম্পত্তি তার ভাগ্নে এজাহারনামীয় আসামি সৈয়দ জহির আহসান জাহিদকে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত আসামি মো. মেজবাহ উদ্দিনের সহযোগীতায় ভিকটিম ইদ্রিস আলীকে ডেকে এনে তার সহযোগী আসামিদের দিয়ে ভিকটিম ইদ্রিসকে হত্যা করে মরদেহ রবিন ভূইয়ার নিজের বাড়ির যে ঘরে মাঝে মধ্যে সৈয়দ জহির আহসান জাহিদ ঘুমাতো ঐ ঘরের পিছনে পুকুরপাড়ে ঘটনাস্থলে ইদ্রিসের মরদেহ ফেলে রেখে চলে যায়।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ