কেউ যাতে গুদামে চাল অযাচিত মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য অভিযান অব্যাহত রাখবে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। যারা অবৈধ মজুত করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে চাহিদার চেয়ে ২ লাখ ৭৩ হাজার মে. টন বেশি ধান উৎপাদিত হয়েছে। ১৪৮ টা চালকলের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে, তারা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করবে। কেউ চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে এবার আর কালো তালিকা করা হবে না। ভ্রাম্যমাণ আদালত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাল থেকেই অভিযান শুরু হবে। অবৈধ মজুতদারি রোধে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘চালের উৎপাদন-বিপণন জোরদারকরণ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল আরও বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির নামে চাল মোড়কজাত করে কেজিতে চার-পাঁচ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করা হয়। রাজশাহীতে এটা করা যাবে না। সরকারকে চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকরা ৪০ টাকা কেজি মোটা চাল সরবরাহ করছেন। অথচ বাজারে মোটা চালের কেজি ৪০ টাকার বেশি। ইতিমধ্যে রাজশাহীতে ৯৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। চাহিদার চেয়ে ধানের উৎপাদনও বেশি। এতে চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে রাজশাহীতে কোনো কোম্পানির মোড়কে চাল বিক্রি করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, অভিযান চালিয়ে কোনো চালকল মালিকের গুদামে যদি অবৈধ চালের মজুত পাওয়া যায়, তাহলে সেই চাল বাজারে সরকারি ৪০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হবে।
সভায় রাজশাহীর চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন বলেন, রাজশাহীতে মোটা চালের দাম বাড়তি দেখে তিনি মঙ্গলবার পাশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৪৭ টাকা কেজি দরে মোটা চাল কিনেছেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী হিসেবে তার একটা কমিশন আছে। একটা পরিবহন খরচ আছে। এগুলো যোগ করেই তাকে ৪৮ টাকা কেজি হিসাবে পাইকারী বিক্রি করতে হবে। খুচরা দোকানে বিক্রি হবে ৫০ টাকা কেজি দরে।
তিনি বলেন, রাজশাহী অনেক ব্যবসায়ীই নওগাঁর সাবাইহাট ও দেলুয়াবাড়ী বাজার থেকে ধান কিনেন। এই বাজারে এখন ধানের দাম ১ হাজার ৫১০ টাকা মণ। এই দামের চাল দিয়ে ৮৪ কেজির এক বস্তা চাল তৈরি করতে তাদের খরচ পড়ছে ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ১০০ টাকা। কেজি প্রতি উৎপাদন খচর পড়ছে ৫৮-৫৯ টাকা। এই চাল থেকে মরা চাল, খুদ বাছাই করলে চালের দাম কেজি প্রতি ৬১ টাকা পড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, চিকন চালের দাম বেড়েছে তাই মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। এই জন্য মোটা চালের দাম বেড়েছে।
রাজশাহী জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। রাজশাহীর মিল মালিকরা গরিব। তারা দেউলিয়া হওয়ার পথে। ছয় বছর আগে জেলায় ৩৪০ টা চালকল ছিল। এখন তাদের সংখ্যা ২০০ এর নিচে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম চাল উৎপাদনকারী দেশ ভিয়েতনামেই মোটা চালের কেজি ৫০ টাকার নিচে নয়। অথচ কালোবাজারির বদনাম হচ্ছে চালকল মালিকদের।
শাহ মখদুম অটো রাইস মিলের প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১০০ কেজি ধান মাড়াই করলে ৫২ থেকে ৫৮ কেজি চাল পাওয়া যায়। অটো রাইস মিলে ভাঙানোর জন্য এক মণ ধান কিনে পরিষ্কার করলে তা থেকে ৩ কেজি বাদ চলে যায়। চাল থেকে পাথর, খুদ, ছোট চাল ইত্যাদি সাত-আট ধরনের জিনিস বেছে বাদ দিতে হয়। এতে করে এক মণ ধান থেকে কোনোভাবেই ২২ কেজির বেশি চাল হয় না। বাজার ৮-৯'শ টাকা শ্রমিকের দাম। এসব মিটিয়ে কৃষককেও ধানটা লাভেই বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, কৃষকরা এই ধান বেচেই সার-কীটনাশক থেকে শুরু করে সবকিছুই করে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চালকল মালিক, ব্যবসায়ী, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর