ঝিনাইদহ সদর পৌরসভা এবং পাগলাকানাই ও সুরাট ইউনিয়নে জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা। উচ্চ আদালতের রায়ে প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তবে প্রচার প্রচরণায় পিছিয়ে নেই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। তারা দিনরাত বিভিন্ন অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন নানা রকম উন্নয়নের ফুলঝুরি। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো পৌর ও ইউনিয়নের গ্রামগুলি।
আগামী ১৫ জুন ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৮১৮৪২জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোট ৩৯৯৫২ ও মহিলা ভোট ৪১৮৯০ জন রয়েছে। সুরাটে ইউপিতে মোট ভোটার ১০৯৫০ জন। পুরুষ ৫৫৪৭ ও মহিলা ৫৪০৩ জন এবং পাগলাকানাই ইউপিতে মোটভোট ১৪১১৪জন। পুরুষ ৬৮৭৪ ও মহিলা ভোটার রয়েছে ৭২৪০জন। পৌরসভায় ভোট কেন্দ্র ৪৭টি, ভোটকক্ষ-২৬৫টি, সুরাটে ভোট কেন্দ্র-১০টি, ভোটকক্ষ-৩৭টি এবং পাগলাকানাই ইউনিয়নে ৯টি ভোটকেন্দ্র ও ৪৮টি ভোটকক্ষে ভোটারগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
এদিকে ঝিনাইদহের দুই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নৌকার প্রচারণা চালানোর জন্য তাদেরকে শোকজ করেছেন নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলি মধ্যে বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন প্রশাসন।
তবে রিটার্রিং কর্মকর্তা আশ্বাস দিয়েছেন শতভাগ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। পৌরসভায় মেয়র পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক। নাগরিক সমাজের ব্যানারে (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসাবে নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল ও মোবাইল প্রতীক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি সদ্য বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান মাসুম। এ তিনজন পুরো পৌর এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে উন্নয়নের নানা রকম ফুলঝুরি দিয়ে ভোটারদের মন আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সিরাজুল ইসলামও হাতপাখা প্রতীক নিয়ে বেড়াচ্ছেন বাড়ি বাড়ি।
জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর অভিযোগ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলের ভাই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির কর্মী সমর্থকেরা। তারা বিভিন্ন নাশকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন।
পৌরসভায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোটার জানান, আমাদের এলাকা এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। যার প্রভাব পড়বে এবারের নির্বাচনে। এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল খালেক আর স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজলের মধ্যে লড়াই হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন সুযোগবুঝে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান মাসুম বের হয়ে যেতে পারেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল খালেক জানান, আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী গভীর ষড়যন্ত্র করে আমার প্রার্থীতা বাতিল করে দিয়েছিল। আমি উচ্চ আদালতের রায়ে আমার প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছি। এখানে তৃমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ। জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা রহস্যজনক হলেও আশা করছি আগামী ১৫ জুন আমি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবো।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজলের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে রিসিভ করে বলছেন ডাক্তার তাকে ফোনে কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, স্বতন্ত্র দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মিজানুর রহমান মাসুমকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তবে কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নন। তার বড়ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলকে আমরা শোকজ করেছি। মূলত এই দুই মেয়র প্রার্থী বিএনপি-জামায়াতের ওপর ভর করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনের মাঠ উত্তপ্ত করে সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে ওই অপশক্তি। তবে অজ্ঞাত কারণে নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলকে এখনও কেন সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়নি- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
পাগলাকানাই ইউনিয়নে ভোট যুদ্ধে লড়ছেন নৌকা প্রতিকের আতাউর রহমান আতা ও মোটরসাইকেল প্রতিক নিয়ে সদ্য বহিস্কৃত সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাঈদ বিশ্বাস। এই ইউনিয়নে বিএনপি ভাগ হয়ে গেছে। কেউ করছেন নৌকার ভোট আবার কেউ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোট। এখানে লড়াই হবে তুমুল আকারে।
সুরাট ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নৌকা প্রতিক নিয়ে কবির হোসেন জোয়ার্দ্দার কেবি, সদর উপজেলা যুবলীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফ হোসেন আনারস প্রতিক, সদ্য বহিস্কৃত সাবেক জেলা যুবলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রাজু আহম্মেদ লাল মোটরসাইকেল প্রতিক ও সাবেক আনসার কমান্ড্যান্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল্লাহ বাবলু অটোরিক্সা প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এখানে নৌকা, আনারস ও মোটরসাইকেল প্রতিকের সাথে ত্রিমুখী লড়াই হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে সীমানা জটিলতা মামলায় ঝিনাইদহ পৌরসভা, সুরাট ও পাগলাকানাই ইউনিয়নে ১১ বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০১১ সালের এপ্রিলে ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে ২০১১ সালের জুন মাসে সর্বশেষ সুরাট ও পাগলাকানাই ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় আদালতের নির্দেশে আগের সীমানায় আগামী ১৫ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল