ভরা এ বর্ষা মওসুমেও চাষের জমিতে পানির জন্য আকাশের দিকে চেয়ে আছে কৃষিপ্রধান দিনাজপুর অঞ্চলের অনেক কৃষক। আমন ধান রোপণের ভরা মৌসুম আষাঢ় মাস শেষ হয়ে গেলেও বৃষ্টির দেখা মিলে নাই। যেখানে ক্ষেতে এ সময়ে জলমগ্ন থাকার কথা সেখানে বৃষ্টির অভাবে অনেক স্থানের ফসলের মাঠ ফেটে গেছে। অন্যদিকে মৃদু তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় এ অঞ্চলে দাবদাহে অতিষ্ট মানুষও। এ অবস্থায় আমন চাষিদের সেচ পাম্পের পানিই এখন একমাত্র ভরসা। এ পানি ক্ষেতে দেওয়ার পর কিছুক্ষনেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে আমন চাষ নিয়ে বিপাকে দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষক। একই অবস্থা গোটা উত্তরাঞ্চল।
আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল হলেও আষাঢ় মাসও শেষ। বর্ষাকালের এ সময় আবাদী জমি থাকে জলমগ্ন। আর জমির এই পানিকে কাজে লাগিয়ে কৃষকরা আমন চাষ করে থাকেন। কিন্তু এবার দিনাজপুরসহ এই অঞ্চলে বৃষ্টির অভাবে জমিতে নেই কোনো পানি। অথচ আমন চারার রোপনের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। কেউ সেচ পাম্পের পানি দিয়ে রোপন শুরু করলেও বেশির ভাগ কৃষক বৃষ্টির অপেক্ষায় আকাশের দিকে চেয়ে আছে। এ কারণে দিনাজপুর জেলায় মাত্র ৬-৭ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ করতে পেরেছেন কৃষক।
সুন্দরবন ইউপির দবিরুল ইসলাম বলেন, যে রোদ, মাঠে কাজ করতে গেলে মাথা ঘোরে। বৃষ্টির অভাবে আমনের চারা রোপণ করা যাচ্ছে না। বৃষ্টির আশায় কৃষকরা আকাশের পানে চেয়ে আছে। বৃষ্টি না হলে ধান রোপণ করাও ব্যয়বহুল।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক জানান, দিনাজপুর জেলায় চলতি মৌসুমে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। আর এর জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত আমন রোপণ হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে।
তিনি আরও জানান, সম্পুরক সেচ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষসহ কৃষকদের সেচযন্ত্র প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলেও সম্পুরক সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে আমন রোপণ করা হবে। তা ছাড়া আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত আমন রোপণ করা যায় এবং বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে জানান তিনি।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন জানান, শুক্রবার দুপুরে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি কিন্তু তা বেড়ে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। গত বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭.১ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলে মৃদু তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহে ৩৪-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা ওটা নামা করেছে।তিনি আরও জানান, দিনাজপুরে গত ৩ জুলাই বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ১ মিলিমিটার। এরপর আর দেখা নেই বৃষ্টির। আগামী ১৮ জুলাইয়ের দিকে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে চলতি মাসের শেষ দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশী রয়েছে এবং তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এএ